‘ইনসান কিসিসে দুনিয়া মে একবার মোহাব্বত করতা হ্যায়, ইস দর্দ কে লেকার জিতে হ্যায়, ইস দর্দ কে লেকার মরতে হ্যায়... পেয়ার কিয়াতো ডরনা কেয়া... যার কণ্ঠে প্রেমের জন্য এমন আকুতি দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারিত হয় তিনি হলেন বলিউডের সর্বকালের সেরা সুন্দরী ও প্রেমের দেবী অভিনেত্রী মধুবালা। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে তাঁর জন্ম হয়েছিল বলেই হয়তো তাঁর ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়েছিল চলচ্চিত্র, দর্শক, নির্মাতা, সহশিল্পী এমনকি পুরো দুনিয়ায়। তাই তো আজও প্রেমের দেবী ভেনাসের সঙ্গে কারও তুলনা করতে গেলে প্রথমেই নির্দ্বিধায় চলে আসে মধুবালার নাম। সবার হৃদয়জুড়ে প্রেমের এক অপ্সরা দেবী হয়ে আছেন তিনি। থাকবেন চিরকাল।
হতাশ মধুবালার পরিবার
আজ মধুবালার ৯২তম জন্মদিন। তাঁর ভক্তরা প্রয়াত তারকার সৌন্দর্য ও চিরকালীন আকর্ষণকে ধারণ করে জমকালো আয়োজনে উদ্যাপন করবেন। মধুবালার ছোট বোন মধুর ব্রিজ ভূষণ বলেছেন, এ দিনটি আমার এবং পরিবারের জন্য অত্যন্ত বিশেষ দিন। অন্যদিকে হতাশারও। কারণ গত বছর মার্চে সনি পিকচার্স মধুবালার জীবনের ওপর একটি বায়োপিক তৈরির ঘোষণা দেয়। চলচ্চিত্র মহলে এটি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। তবে ফিল্মটি সম্পর্কে এখনো কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। এজন্য সনি পিকচার্সকে আইনি নোটিস দিতে যাচ্ছেন মধুবালার বোন। হিদুস্তান টাইমসকে মধুর আরও জানান, তিনি মধুবালার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছু বিশেষ কাজ করতে চেয়েছিলেন। যেমন তাঁর ম্যুরাল স্থাপন, একটি বৃদ্ধাশ্রম এবং সংগীত বিদ্যালয় স্থাপন করা। কিন্তু সিনেমাটি নিয়ে অযৌক্তিক বিলম্বের কারণে সেগুলোও এখন স্থগিত করতে হয়েছে।
৩৬ বছরের কষ্টের জীবন
মধুবালা জন্মেছিলেন ১৯৩৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি হৃৎপিণ্ডে ছোট্ট একটি ছিদ্র নিয়ে। এ কারণে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৩৬ বছর বয়সে চিরবিদায় নেন। ১৯৪২ থেকে ১৯৬০ সালের অভিনয়জীবনে ৭০টির মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
মমতাজ থেকে মধুবালা
চলচ্চিত্রে পা রাখার আগে তাঁর নাম ছিল মমতাজ জাহান বেগম দেহলভি। ১৯৪২ সালে ‘বসন্ত’ চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু। পরে আরও কয়েকটি ছবিতে শিশুশিল্পী। সে সময় অভিনেত্রী দেবিকা রানি শিশু মমতাজ জাহানের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে তাঁর নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘মধুবালা’। ১৯৪৯ সালে নির্মিত হয় ‘মহল’ চলচ্চিত্র। এতে মূল চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান মধুবালা। সে বছর ভারতে বক্স অফিসের সেরা আয়ের তিনটি ছবির একটি ছিল মহল। এ ছবির সাফল্যে তিনি পৌঁছে যান বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রীর মহলে।
যে কারণে অভিনয়ে আসা
মধুবালা একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা পাকিস্তানের পেশোয়ারের টোব্যাকো কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তাঁর চাকরি চলে যাওয়ায় সংসারের অভাব দূর করতে মাত্র ৯ বছর বয়সে অভিনয়ে নামেন মধুবালা। ১৯৪৪ সালের ১৪ এপ্রিল মুম্বাই ডকে বিস্ফোরণের ঘটনায় হারিয়ে যায় তাঁদের ছোট্ট ঘরটিও। নিজে পরিশ্রম করে মা এবং চার বোনের অন্ন সংস্থান করেছিলেন।
মধুবালার যত প্রেম
মধুবালার জীবনে প্রেমের তরী ভিড়িয়েছিলেন অনেক পুরুষ। এর মধ্যে অভিনেতা দিলীপ কুমারের নাম বোধহয় সবচেয়ে বেশিবার এসেছে। এ জুটির প্রথম দেখা হয় ‘জোয়ার ভাটা’ ছবির সেটে, ১৯৪৪ সালে। ১৯৫১ সালে দিলীপ কুমারের সঙ্গে ‘তারানা’ ছবিতে অভিনয়ের সময় তাঁরা একে অপরের প্রেমে পড়েন। বাস্তবে এ জুটির সম্পর্ক ছিল পাঁচ বছর। বিয়ে পর্যন্ত না গেলেও এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হয়েছিল তাঁদের। বিয়ের জন্য দিলীপ কুমার নাকি মধুবালাকে দুটো শর্ত দিয়েছিলেন। এক. বিয়ের পর নিজের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যাবে না, দুই. অভিনয় ছাড়তে হবে। পর্দাজীবন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করতে পারলেও পরিবার ছাড়তে রাজি ছিলেন না মধুবালা। এরপরই ভেঙে যায় তাঁদের সম্পর্ক। মধুবালার জীবনে প্রেমিকের তালিকায় ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। ১৯৫৮ সালে ভুট্টো যখন পাকিস্তানের মন্ত্রী হন তখনই তিনি ভারতে যান। সে সূত্রেই অনিন্দ্য সুন্দরী অভিনেত্রী মধুবালার সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। কিন্তু এ সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
কিশোর কুমারের সঙ্গে বিয়ে
দিলীপ কুমার আর ভুট্টোর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের সমাধি রচনার পর ১৯৬০ সালে মধুবালা বিয়ে করেন গায়ক-নায়ক কিশোর কুমারকে। মধুবালাকে নিয়ে তাঁর বোনের লেখা জীবনীতে জানা যায়- কিশোর কুমারকে বিয়ে করলেও তিনি দিলীপ কুমারকেই ভালোবাসতেন। এমনকি দিলীপ কুমারকে দেখানোর জন্যই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেছিলেন তিনি।