‘আমার পেশা ছিল অভিনয় করা, কারও সঙ্গে যুদ্ধ করা না। আমি কোনো দিন পার্টি বা আড্ডাবাজি করিনি। আমি ফ্যামিলি ওরিয়েন্টেড মানুষ, কাজ শেষ করেছি, ঘরে চলে এসেছি। আজ কেন আবার আমার পরিবারের সঙ্গে আমাকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এটি তো আমি কখনো চাইনি।’ বড় আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বললেন অভিনেত্রী পপি।
২০২১ সালের শুরুর দিকে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান তিনি। চলচ্চিত্রের মানুষ এমনকি সাংবাদিকরাও তাঁকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এ অন্তরালে থাকাকালীন তাঁর গোপন বিয়ে এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। কিন্তু পপিকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না বলে এসব খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না। ব্যবসায়ী আদনান উদ্দীন কামালের সঙ্গে তাঁর গোপন বিয়ের খবর যখন চাউর হয়েছিল তখন সেই আদনানও এ বিয়ের খবর অস্বীকার করে বলেছিলেন, ‘পপিকে আমি বিয়ে করিনি, আমার পরিবার আছে, পপি শুধুই আমার একজন ভালো বন্ধু’। এরপর নানা ধোঁয়াশার মধ্য দিয়েই কেটে গেছে চারটি বছর। পপির দেখা আর মেলেনি। হ্যাঁ ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে একবার জনসম্মুখে আসেন পপি। তখন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন নায়ক জায়েদ খান। মূলত এ নায়কের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তুলে ধরতে অজ্ঞাত স্থান থেকে ওই ভিডিও বার্তাটি প্রকাশ করেন তিনি। ব্যস, ওই পর্যন্তই। পপি আবার অধরা হয়ে যান।
২০২১ সালের মার্চে ‘ধোঁয়া’ শিরোনামের একটি ছবির কাজ শুরু করার কথা ছিল এ অভিনেত্রীর। কিন্তু তার আগেই তিনি লাপাত্তা হন। আড়ালে থাকার কারণে আটকে যায় পপি অভিনীত কয়েকটি সিনেমার কাজ। এর মধ্যে রয়েছে- রাজু আলীম ও মাসুমা তানি পরিচালিত ‘ভালোবাসার প্রজাপতি’, আরিফুর জামান আরিফের ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ এবং সাদেক সিদ্দিকী পরিচালিত ‘ডাইরেক্ট অ্যাটাক’ ছবিগুলো। এর মধ্যে সাদেক সিদ্দিকী কোনোভাবে ‘ডাইরেক্ট অ্যাটাক’ ছবির কাজ শেষ করেন। অন্য ছবিগুলোর ভাগ্য কী হবে? এমন প্রশ্নে পপি বলেন, আমিতো এখন সংসার সন্তান নিয়ে ব্যস্ত এবং আগে সব সময়ই আমি বলে এসেছিলাম যে, সংসারজীবনে যদি কখনো প্রবেশ করি তাহলে আর অভিনয়ে সময় দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই অভিনয়ে ফেরার ইচ্ছা এ মুহূর্তে আমার আর নেই।’ পপি এ-ও আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, ‘যদি কখনো সময় পাই, তাহলে আমার কারণে আটকে থাকা ছবিগুলোর কাজ হয়তো শেষ করে দিতে চেষ্টা করব।’ বিয়ে কখন করেছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাব দিতে স্বস্তিবোধ করেননি এ বুনো সুন্দরী। শুধু বললেন, ‘এইতো, ২০২০ সালের দিকে।’ ২০২১ সালে পপি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। নাম রেখেছেন- আয়াত। পপিকে প্রশ্ন করা হয়- আপনিতো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘বিয়ে করাতো কোনো অপরাধ নয়, তাই গোপনে কেন বিয়ে করব, বিয়ে করলে ঢাকঢোল বাজিয়েই করব।’ কিন্তু আপনিতো বিয়ের কথা গোপন করলেন, কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে পপি বলেন, ‘এতে আমার কোনো দোষ নেই, আসলে আদনানের পরিবার চায়নি আমার বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসুক, তাই কাউকে এ খবর জানাতে পারিনি।’
পপির কাছে জানতে চাইলাম, ‘পারিবারিক বিরোধ নিয়ে শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেবেন?’ এর জবাবে আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমার সহ্য আর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। কমপক্ষে দুই দশক ধরে অভিনয় করে যা আয় করেছি সব পরিবারের জন্যই ব্যয় করেছি। নিজের জন্য এক পয়সাও জমাতে পারিনি। এতে কিন্তু আমার কোনো অভিযোগ ছিল না। কারণ তারাতো আমারই মা-বাবা, ভাই-বোন। পরিবারের বড় মেয়ে হিসেবে এ দায়িত্ব পালনে আমার কোনো আফসোসও ছিল না। কিন্তু তারা নানা সময় নানাভাবে আমাকে নাজেহাল করেছে। তারপরও মুখ বুজে সব সহ্য করেছি। তবে এবার কেন আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হলো। আমাকে কি কখনোই তারা শান্তিতে থাকতে দেবে না। কী অপরাধ আমার, আমি জানতে চাই। তারা যদি এখনো শান্তি চায় এবং আমাকে শান্তিতে থাকতে দেয় তাহলে আমি তাদের আবারও ক্ষমা করে দেব। নয়তো আইনের পথ ধরেই সবকিছু এগোবে।’ সংসার কেমন কাটছে? জানতে চাইলে পপি বলেন, ‘ও (স্বামী আদনান) খুব ভালো মনের মানুষ, তাই স্বামী সন্তান সংসার নিয়ে খুব ভালো আছি। সবার দোয়া চাই যেন সব সময় ভালো থাকতে পারি।’ সবশেষে জানতে চাইলাম, ‘আপনার অগণিত দর্শক-ভক্ত-অনুরাগীকে নিজের বিয়ের নিমন্ত্রণ থেকে কি বঞ্চিত করবেন?’ এমন প্রশ্নে এবার নিজের চোখ মুখের ওপর থেকে মেঘমালা কিছুটা সরিয়ে নিয়ে স্মিথ হেসে বলেন, ‘না... না... তা কেন হবে? সব ঝামেলা থেকে একটু সামলে উঠতে দেন, তারপর সবার সঙ্গে অনুষ্ঠান করে দেখা হবে।’