রংপুরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে এক অটো চালক নিহত হয়েছেন। রংপুরে আট উপজেলর ঊপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে কয়েকশত গাছপালা-ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শনিবার রাত ১০টা ২৫ মিনিট থেকে ১১টা ১০ মিনিট পর্যন্ত চলা এই ঝড়ে ঘরবাড়ি, গাছপালা ভেঙে পড়ার পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আম, লিচু, উঠতি বোরো ধান ও ভুট্টার। তবে কৃষি অফিস বলছে ঝড়ে ফসলের খুব একটা ক্ষতি হয়নি। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা হচ্ছে।
রাত ১০টা ২৫ মিনিটে শুরু হয় তীব্র ঝড়ো হাওয়া। এসময় হারাগাছ পৌর এলাকার হকবাজার নয়াটারি এলাকার আটোচালক মোফাজ্জল হোসেন (৬০) গাছ চাপায় নিহত হন। তিনি ওই এলাকার মৃত আসান উল্লার ছেলে। স্থানীয় শোয়েব দুলাল জানান, ঝড়ের সময় ওই ব্যক্তি আটো রিকশা দেখার জন্য ঘর থেকে বের হন। এসময় একটি খেঁজুর গাছ ভেঙে আম গাছের ওপর পরে। পরে আমগাছটি তার ওপরে পড়ে। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান।
তিনি আরও জানান, হারাগাছ পৌর এলাকার মিয়াপাড়া গ্রামের এক খামারীর গোয়ালঘর বাতাসে উড়ে গেছে এবং একটি গরু মারা গেছে। এছাড়া বেশ কিছু ঘরের চালা উড়ে গেছে এবং গাছ পালার ক্ষতি হয়েছে।
রংপুর নগরীর বখতিয়ারপুর এলাকার সুজেল খানের ১২টি লিচু গাছ ও দুই সুপারি গাছ উপড়ে পড়েছে। এছাড়া একটি টিনের চালা উড়ে গেছে। তিনি বলেন, ঝড়ে আমার স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। ওই এলাকার মসিউর রহমানের লিচু গাছ ঘরের ওপর পড়েছে। নগরীর শাহিপাড়া এলাকায় একটি বিশাল জাম গাছ পড়ে গেছে। নগরীর রবাটশনগঞ্জ এলাকায় একটি বড় পাইকর গাছ পড়ে গিয়ে চারটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া অনেক স্থানে ধান গাছ হেলে পড়েছে।
এদিকে গোপালপুর, খোড়াগাছ এলাকার আমচাষি আমজাদ হোসেন, বেলাল হোসেন, বাকের আলী, অনিছুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম জানান ঝড়ে তাদের আম বাগানের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এবার কাঙ্খিত ফলন না পাওয়ার শঙ্কা তাদের।
এদিকে ঝড়ের সময় চলে যায় বিদ্যুৎ। অন্ধকারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জনমনে। থমকে যায় নগরীর স্বাভাবিক জীবন। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ। অন্ধকারে ঢাকা পড়ে পুরো শহর। ঝড়ের তান্ডবে শহরের মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়।
কালবৈশাখীর এই তাণ্ডবে রংপুর মহানগরীর জিএলরায় রোড় স্টেশন রোড, কাচারি বাজারের আশপাশ এলাকায় কয়েকটি গাছ উপড়ে পড়েছে। গংগাছড়া, বদরগঞ্জ, পীরগাছা, কাউনিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মাঠের উঠতি বোরো ধান, ভুট্টা ও গাছে ধরতে শুরু করা আমের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলার বড়বিল ইউনিয়নের মন্থনা, বাগপুর, মনিরাম, কোলকোন্দ ইউনিয়নের গোডাউনের হাট, পীরের হাট, কুটিরপাড়া, আলমবিদিতর ইউনিয়নের বড়াইবাড়ি, মন্ডলেরহাট, নোহালি ইউয়িনের নোহালিহাট, আনোরমারিসহ রংপুর সদর কাউনিয়া, বদরগঞ্জে ঝড়ে কয়েক শতাধিক গাছ পড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বেশ কিছু টিনের চালা উড়ে গেছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮ নটিক্যাল মাইল।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করিছি। ঝড়ে তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। কোথাও কোথাও ধানগাছ হেলে পড়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল