মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উত্তেজনা যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে বিশ্বজুড়ে তেল, স্বর্ণ, খাদ্য ও পণ্যের দামে ব্যাপক উল্লম্ফন ঘটবে, যা অর্থনৈতিক মন্দা ডেকে আনতে পারে।
ইসরায়েলের হঠাৎ আক্রমণে ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন এবং পারমাণবিক স্থাপনাসহ দক্ষিণ পার্স গ্যাস ক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটে।
জবাবে ইরান ইসরায়েলের দিকে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইসরায়েল দাবি করেছে, বেশিরভাগ হামলা তারা প্রতিহত করেছে।
বিশ্বের প্রধান প্রধান শেয়ারবাজারে এই সংঘাতের প্রভাব পড়েছে। শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিটে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ এবং নাসডাক কম্পোজিট সূচক যথাক্রমে ১.১% ও ১.৩% হ্রাস পেয়েছে। ইউরোপের ড্যাক্স, ক্যাক ৪০ এবং যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচকও নিম্নমুখী ছিল।
তবে স্বর্ণ ও তেলের দাম উর্ধ্বমুখী। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭৪.৬০ ডলারে পৌঁছেছে, যা বৃহস্পতিবারের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি আউন্স ৩,৪২৬ ডলারে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এই প্রণালী দিয়ে বিশ্বে প্রতিদিন ২ কোটির বেশি ব্যারেল তেল পরিবহন হয়, যা বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহের এক-তৃতীয়াংশ। তবে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে ইরানের নিজেদের রপ্তানিও ব্যাহত হবে, বিশেষত চীনে, তাই তেহরান এমন ঝুঁকি নিতে দ্বিধায় থাকতে পারে।
বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে জি৭ দেশের নীতিনির্ধারকরা সুদের হার কমানোর পথে থাকলেও নতুন করে জ্বালানি দামের উল্লম্ফন তাদের এই পরিকল্পনায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিমান চলাচল খাতও ক্ষতিগ্রস্ত। এমিরেটস, এথিহাদ, কাতার এয়ারওয়েজসহ অনেক এয়ারলাইন ইরান, ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান ও লেবাননে ফ্লাইট বাতিল বা স্থগিত করেছে। ইরান ও ইরাক তাদের আকাশপথ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি যদি মধ্যপন্থী থাকে তবে বাজার পুনরুদ্ধার করতে পারে, তবে যুদ্ধের মাত্রা বাড়লে দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব পড়বে।
মূল লেখক: আলেক্স কোজুল-রাইট
সূত্র: আল জাজিরা
বিডি প্রতিদিন/আশিক