ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব বৈসু উপলক্ষে পাহাড়ে চলছে গরিয়া নৃত্যের বর্ণাঢ্য আয়োজন। খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য এলাকার পাড়া-মহল্লায় এখন উৎসবমুখর পরিবেশ, পাহাড়ি ঢাল বেয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গরিয়া দেবতার বন্দনার সুর ও নৃত্যের ছন্দ।
ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর হাজার বছরের পুরোনো সংস্কৃতি, বিশ্বাস ও ঐতিহ্য বহন করে আসছে এই গরিয়া নৃত্য। বৈসু উৎসবকে ঘিরেই এর প্রধান আয়োজন। চৈত্র মাসের শেষ দুই দিন ও বৈশাখের প্রথম দিন মিলে তিন দিনব্যাপী চলে এই উৎসব, যেখানে গরিয়া দেবতার প্রতিমূর্তি বহন করে এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায় গিয়ে নৃত্য পরিবেশন করে ‘খেরবাই’ দল।
এই গরিয়া নৃত্যে রয়েছে ২২টি ছন্দ ও ভঙ্গিমা—যা দেবতাকে আহ্বান থেকে শুরু করে পূজা, কীর্তন, আশীর্বাদ প্রার্থনা, উৎসব উদযাপন এবং বিদায় পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে প্রতিফলিত হয়। প্রতিটি ধাপেই গাওয়া হয় নির্দিষ্ট গান, ব্যবহার হয় বাঁশি ও ঢোল, আর দেহভঙ্গিমায় ফুটে ওঠে বিশ্বাস, আবেগ ও আনন্দ।
গরিয়া নৃত্য কেবল বিনোদন নয়, এটি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সামাজিক বন্ধন ও ঐক্যের প্রতীক। গ্রামের সব মানুষের মঙ্গল, সুখ-সমৃদ্ধি কামনায় আয়োজন করা হয় গরিয়া দেবতার পূজা ও উৎসব।
ত্রিপুরাদের জীবন ও জীবিকার নানা দিক নিয়ে খেলা ও অভিনয়ের মাধ্যমে এই নৃত্য হয়ে ওঠে এক জীবন্ত সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা। গরিয়া উৎসব এবং এই নৃত্যকে ঘিরেই পাহাড়ে গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়।
নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি বৈসু এখন পাহাড়ি জনপদে ত্রিপুরাদের আত্মপরিচয়ের উৎসব হয়ে উঠেছে। পাহাড়ের পাড়ায় পাড়ায় এখন শুধুই ছন্দ, সুর আর ঐতিহ্যের জয়গান।
বিডি প্রতিদিন/মুসা