শীতের পিঠাপুলি বাঙালির আদি খাদ্য সংস্কৃতির একটি অংশ। বাংলার চিরায়ত লোকজ সংস্কৃতিতে পিঠা পায়েস বিশেষ স্থান দখল করে আছে। প্রতিবছরই শীতকালে দেশজুড়ে পিঠা তৈরির ব্যস্ততা চোখে পড়ে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বাড়ির ন্যায় বর্তমানে শহরেও ধুম পড়ে যায় হরেক রকমের পিঠার। প্রতিবারের মতো এবারেও শীতের পিঠা বিক্রির ধুম পড়েছে ফেনী শহরের ফুটপাতগুলোতে। হরেক রকমের ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা (ফেনীর খোলা পিঠা) খেতে ভিড় করছেন ভোজনরসিকেরা। বিকেল হলেই ভিড় বাড়ছে ফুটপাতের পিঠার দোকানগুলোতে।
সরেজমিন শহরের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, একটি স্কুলের ফটকের সামনে রাস্তায় পিঠার ভ্রাম্যমাণ দোকান। শীতের সন্ধ্যায় সেখানে পিঠা খেতে ভিড় জমিয়েছে নানা বয়সী মানুষ। পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দোকানিরা। দোকানগুলোতে কাঠ-খড়ি দিয়ে জ্বলছে দুই-চারটি করে চুলা। একটিতে মাটির খোলা, অন্যটিতে ভাপা পিঠা তৈরির পাতিল বসানো। পিঠা তৈরির ছাঁচে চালের গুঁড়া নিয়ে তার ওপর গুড়, নারিকেল ছিটিয়ে দিয়ে ভাপে দিচ্ছিলেন দোকানিরা। খোলায় বানানো হচ্ছিল চিতই পিঠা। তৈরি হতেই গরম-গরম ধোঁয়া উঠছে পিঠায়। চিতই পিঠা ক্রেতাদের জন্য ধনেপাতা, কালোজিরা, ডিম স্পেশাল, শুঁটকিসহ নানান ধরনের ভর্তা।
পিঠা খেতে আসা শহরের এস.এস.কে রোডের বাসিন্দা মিষ্টি চৌধুরী বলেন, ‘এখন আর আগের মতো গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয় না। তাই বলে শীত এলে পিঠা খাব না তা তো হবে না। সে জন্য ছোট মেয়েকে নিয়ে ফুটপাতের দোকানে পিঠা খেতে এসেছি। বিভিন্ন ভর্তা দিয়ে গরম-গরম চিতই পিঠা খেতে ভালোই লাগে।’
মো. হারুন বলেন, ‘চিতই পিঠা ভিজিয়ে খেতে ছেলেমেয়েরা খুবই পছন্দ করে। শহরে থাকায় বাসায় পিঠার স্বাদ নেওয়াটা কষ্টসাধ্য। তাই মাঝেমধ্যে ফুটপাত থেকে পিঠা কিনে নিয়ে যাই।’
শিক্ষার্থী হামজা ইসলাম বলেন, ‘প্রায় দিনই বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে পিঠা খেয়ে আসি। বিশেষ করে চিতই পিঠা বিভিন্ন ধরনের ভর্তা দিয়ে খেতে খুব ভালো লাগে।’
খেজুর চত্বরের সামনে ভাপা পিঠা খেতে আসা আহমেদ রুবেল জানান, চাকরির কারণে বাড়িতে যাওয়া হয় খুব কম। তবে এই শীতের মৌসুমে সস্তায় পিঠা খেতে ভালোই লাগে, অনেকটা মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ পাওয়া যায় এতে।
পিঠা বিক্রেতা ফুল মিয়া বলেন, এখন শুধু চিতই পিঠা বিক্রি করছেন। বিকেল থেকে রাত ৯টার মধ্যে প্রায় ২০ কেজি চালের পিঠা বিক্রি হচ্ছে। এ সময় কেউ এখানে বসে গরম-গরম খাচ্ছে, আবার অনেকে নিয়ে যাচ্ছে। গরম পিঠার সঙ্গে তিন ধরনের ভর্তা দেন।
আরেক পিঠা বিক্রেতা আছিয়া বেগম জানালেন, ঢেঁকিতে চাল কুটে তিনি পিঠা তৈরি করেন। যার কারণে তার পিঠা ভালো হয়। এখন দিনে প্রায় ১৫-২২ কেজি চালের পিঠা বিক্রি করছেন। পার্সেলে ১০-৫০টি পিঠা প্রতিনিয়তই যাচ্ছে। পিঠার সঙ্গে ৪ ধরনের ভর্তা ফ্রি দেন। তা ছাড়া তিনি ভাপা পিঠাও তৈরি করেন। শীত আরো যত বাড়বে তার পিঠা বিক্রিও তত বাড়বে।
শহরের ব্যস্ততম স্থান ট্রাংক রোডের পিঠা ব্যবসায়ী নেয়ামত উল্লাহ জানান, আমি প্রতিদিন বিকাল বেলায় দোকান নিয়ে বসি। বেচাকেনা ভাল হলে দিন ছয় থেকে সাত হাজার টাকার পিঠা বেচতে পারি, এতে করে এক থেকে দেড় হাজার টাকা লাভ হয়। আবার কোনো কোনো দিন ব্যবসা খারাপও হয়ে থাকে।
ফুটপাতের পিঠা বিক্রেতা নাছিমা আক্তার বলেন, আমার স্বামী একজন ভ্যান চালক। শীতে কাজ করতে তার খুব কষ্ট হয়। তাই শীত এলেই সংসারের পাশাপাশি পিঠা বিক্রি করি। দৈনিক ৫/৬ কেজির চাল গুড়া করে বিক্রি করে থাকি। এতে বাড়তি কিছু আয় হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম