কুমিল্লা মহানগরীতে বেড়েছে নিয়ন্ত্রণহীন অটোরিকশা। সেই সঙ্গে প্রতিদিনই বাড়ছে এসব অটোর ধাক্কায় বা উল্টে পড়ে পঙ্গু মানুষের সংখ্যা। মাত্রাতিরিক্ত অটোরিকশায় যানজট বাড়ছে। বেপরোয়া গতিতে ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রাণহানিও।
ট্রাফিক পুলিশ, বিভিন্ন পেশার যাত্রী, সিটি করপোরেশন সূত্র জানান, কুমিল্লা মহানগরীতে যে সরু সড়ক ৫ হাজারের বেশি অটোরিকশা চলার অবস্থা নেই। সেখানে চলছে ৪০ হাজারের বেশি অটোরিকশা। প্রতিদিনই এ সংখ্যা বাড়ছে। এসব অটোরিকশার নিয়ন্ত্রণে কোনো কর্তৃপক্ষও নেই। ১০ বছর আগে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ৮ হাজার পায়েচালিত রিকশার লাইসেন্স দিলেও এখন তা মেয়াদোত্তীর্ণ। নগরীতে পায়েচালিত রিকশা এখন নেই বললেই চলে। অতিরিক্ত অটোরিকশায় যানজট বাড়ছে। বেপরোয়া গতির কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। ডা. রিপন নামে এক নগরবাসী অটোরিকশা দুর্ঘটনায় মারা যান। এক সপ্তাহে দুর্ঘটনায় কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের উম্মে হাবিবা, কুমিল্লা রূপসী বাংলা কলেজের আকলিমা আক্তার নামে দুই এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পা দুই টুকরা হয়ে যায়। কুমিল্লা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শোয়েব সোহেল আহত হন। পা ভেঙে যায় বৈশাখী টিভির কুমিল্লা প্রতিনিধি আনোয়ার হোসাইন ও ভাষাসৈনিক অজিত গুহ মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক মেহেরুন নাহারের। তাঁরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। দুর্ঘটনার আতঙ্ক তাঁদের তাড়িয়ে বেড়ায়।
শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষার শেষ দিন আমি দুর্ঘটনার শিকার হই। পা দুই ভাগ হয়ে যায়। সে কারণে পরীক্ষা দিতে পারিনি। জীবনের একটি বছর নষ্ট হয়ে গেছে। অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ না করলে আমার মতো আরও অনেকে পঙ্গু হবে।’ শিক্ষার্থী আকলিমা আক্তার বলেন, ‘পরীক্ষা দিতে রওনা হয়েছিলাম। পথে অটোরিকশা উল্টে পায়ের ওপর পড়ে। ব্যথার জন্য পরীক্ষাও তেমন ভালো হয়নি। ঠিকমতো পড়তেও পারি না।’
শিক্ষক মেহেরুন নাহার বলেন, ‘ফয়জুন্নসা স্কুলের মোড়ে খালি রাস্তায় বাঁক ঘুরতে গিয়ে বেপরোয়া গতির অটোরিকশা উল্টে পা ভেঙে যায়। চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা-ঢাকা দৌড়াদৌড়ি করছি।’ সাংবাদিক আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘অটোরিকশা উল্টে আমার পা কয়েক ভাগ হয়ে যায়। তিন মাস বিছানায় ছিলাম। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারিনি।’ ভাষাসৈনিক অজিত গুহ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই অটোরিকশা দুর্ঘটনায় মানুষ আহতের খবর শুনি। এভাবে চলতে পারে না। অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।’
নগরীর যানজট নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য, কুমিল্লা পৌরসভার প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের এডিএমকে প্রধান করে এ নিয়ে গঠিত কমিটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নগরীতে মিশুক ৫ হাজার ও ছয় সিটের অটোরিকশা ১ হাজার অনুমোদন দেওয়া হবে। তাদের বারকোড দেওয়া হবে। নগরীর আটটি প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে দুর্ঘটনা ও যানজট কমবে আশা করছি।’
কুমিল্লা জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সরওয়ার মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, ‘অটোরিকশার অনুমোদন ও নিয়ন্ত্রণ সিটি করপোরেশনের কাজ। চালকের অধিকাংশ গাড়ি চালানোর নিয়ম জানেন না। কারও লাইসেন্স নেই। সড়কে যে পরিমাণ গাড়ি চলার কথা তার থেকে ১০ গুণ বেশি চলছে। তাই যানজট ও দুর্ঘটনা বাড়ছে। আমরা সীমিত জনবল নিয়ে কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছি।’