জুলাই অভ্যুত্থানের পর সিন্ডিকেটের কবল থেকে মুক্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে উত্তরবঙ্গের সমতল অঞ্চলের চা চাষিরা। উত্তরবঙ্গ দেশের তৃতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল। সমতল ভূমিতে ক্ষুদ্র চাষিরা চা আবাদ করে ভাগ্য পরিবর্তন করে আসছিলেন। কিন্তু গত ১৫ বছরে চা কারখানা মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছিলেন না তারা। চা পাতার ন্যায্যমূল্যের জন্য বছরের পর বছর আন্দোলন করে আসছিলেন তারা। দুটি পাতা একটি কুড়ি সরবরাহের বদলে ৫-৬ পাতার সবুজ পাতা সরবরাহ করছিলেন চাষিরা। এই পাতা দিয়েই চা উৎপাদন করছিল কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে চায়ের মান কমে যাওয়ায় উত্তরবঙ্গের চায়ের সুনাম নষ্ট হচ্ছিল। অন্যদিকে সবুজ পাতার ন্যায্য দাম না পাওয়ায় অনেক চাষি চা বাগান তুলে ফেলছিলেন। জুলাই বিপ্লবের পর অংশীজনদের সঙ্গে কয়েক দফা সভা করে সিন্ডিকেট ভেঙে চা পাতার নতুন মূল্য নির্ধারণ করে প্রশাসন। কারখানায় তিন পাতা সরবরাহের নির্দেশনা দেওয়া হয় চাষিদের। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চা পাতা সরবরাহ করছেন চাষিরা। কোনোরকম ডিডাকশন ছাড়াই ১৭ টাকা কেজি দরে কাঁচা চা পাতা কিনছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। উত্তরবঙ্গে উন্নতমানের চা উৎপাদন হলেও চাষি এবং শ্রমিকরা বলছেন তিন পাতা সরবরাহের কারণে খরচ উঠলেও তারা মুনাফা পাচ্ছেন না। চা শ্রমিকরাও বঞ্চিত হচ্ছেন নায্য মজুরি থেকে।
সদর উপজেলার অমরখানা এলাকার তরুণ চা চাষি মানিক খান জানান, জুলাই বিপ্লবের পর কারখানা মালিকদের সিন্ডিকেট ভেঙে গেছে। তারা ডিডাকশনের নাম করে সবুজ পাতা আর কাটেন না। নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করছে। কিন্তু ৫-৬ পাতা সরবরাহের ফলে ওজন ছিল বেশি। এখন তিন পাতা সরবরাহের ফলে ওজন কমে গেছে। কারখানা মালিকরা বলছেন সরকার চা সরবরাহে ৩ টাকা ভ্যাট নির্ধারণ করেছে। এটা চাষিদের কাছ থেকে নেওয়ার কথা থাকলেও পরিশোধ করতে হচ্ছে কারখানা কর্তৃপক্ষকে।
সাজেদা টি ফ্যাক্টরির ম্যানেজিং ডিরেক্টর আসাদুজ্জামান জানান, ৩ টাকা ভ্যাট চাষিদের কাছ থেকে কেটে নেওয়া হলে তারা লোকশান গুনবে। কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নেওয়া হলে তারাও লোকশান গুনবে। বিডার এবং বায়াররা বলছেন এখন ভালো চা তৈরি হচ্ছে। সিলেট এবং চট্টগ্রামভিত্তিক একটি বড় সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে উত্তরবঙ্গের চা শিল্প আরও অগ্রসর হবে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফ খান জানান সিন্ডিকেট ভেঙে উত্তরবঙ্গের চাশিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালে ১৪ দশমিক ৪০ মিলিয়ন কেজি চা পাতা উৎপাদন হয়েছে। ২০২৫ সালে ১৫ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন চা পাতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও জেলা সবুজ চা পাতা মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভাপতি মো. সাবেত আলী জানান, অংশীজনের সঙ্গে সভা করে চা শিল্পকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন যেসব ছোট সমস্যা রয়েছে আশা করি শিগগিরই সমাধান হয়ে যাবে।