আলোচনা, সেমিনার, ফুলেল শ্রদ্ধা, ফাতেহা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানান আয়োজনে সাজানো ছিল বিদ্রোহী কবি ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা।
মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে ফুলে ফুলে ঢাকা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ-সংলগ্ন কবির সমাধি। দিনটি স্মরণে গতকাল কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। এদিন ভোর সাড়ে ৬টা থেকে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শুরুতেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও এর অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সমাধিতে শ্রদ্ধার ফুল নিবেদন করেন। পরে তারা কবর জিয়ারত করেন। এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
এ সময় রিজভী বলেন, ‘আমাদের কাছে মূল প্রেরণার উৎস কবি নজরুল। তার অমর সৃষ্টি যত দিন বেঁচে আছে ততদিন এ দেশের মানুষকে মাথা নত করতে দেবে না। যারা এ দেশে নানা আন্দোলন, সংগ্রাম থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত মানুষের পক্ষে, জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন তারাই কবি কাজী নজরুল ইসলামের সার্থক উত্তরসূরি।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, ‘নজরুল জীবনভর সাম্যের জয়গান গেয়েছেন। তিনি সবসময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। সেই মূল্যবোধ ও চেতনাকে ধারণ করে ছাত্র-জনতা চব্বিশের গণ অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন। তাই কবি নজরুল এখন আমাদের জাতীয় জীবনে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।’
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও হল, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস), জাতীয়তাবাদী লেখক ফোরাম, নজরুল একাডেমি, বাঁশরী, নজরুল সংগীত শিল্পী সংস্থা, জাতীয় কবিতা পরিষদ, জাতীয় কবি নীতিমালা আইন প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন কমিটি, নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, নজরুলসংগীত শিল্পী সংস্থা, নজরুল প্রমিলা পরিষদ, শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি সংগ্রহশালাসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
কবির নাতনি খিলখিল কাজী বলেন, ‘নজরুলকে নতুন প্রজন্মের মাঝে জানাতে কেবল দিবসকেন্দ্রিক স্মরণ করাটাই যথেষ্ট নয়। নজরুল কতটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গেছেন, তা নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে।’ এদিকে, জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিকালে বাংলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় সেমিনার ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ‘নজরুলের মৌলচেতনা অদ্বৈতবাদী সমন্বয়ের’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক। আলোচনায় অংশ নেন নজরুল গবেষক ড. সৈয়দা মোতাহেরা বানু এবং কবি ও প্রাবন্ধিক কাজী নাসির মামুন। সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। স্বাগত বক্তৃতা করেন একাডেমির সচিব ড. মো. সেলিম রেজা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন টিটো মুন্সী এবং নজরুলগীতি পরিবেশন করেন ফেরদৌস আরা, শহীদ কবির পলাশ এবং তানভীর আলম সজীব। আর গান ও কথামালায় জাতীয় কবিকে স্মরণ করেছে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। গতকাল সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তনের আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করেন ছায়ানটের নিজস্ব শিল্পীরা। আয়োজনটি ছায়ানটের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।