ঢাকার মিরপুরে ২০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা কেন্দ্রীয় সরকারি মুরগির খামারটি বছরে অন্তত ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পরিচালিত হলেও উৎপাদন সক্ষমতা দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার প্রায় অর্ধশতক পরও খামারটি দেশের পোলট্রি শিল্পে প্রতিযোগিতামূলক অবদান রাখতে পারেনি। আগে মাসে গড়ে ২ লাখ মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হলেও গত চার অর্থবছরে খামারটি গড়ে মাত্র সাড়ে তিন লাখ বাচ্চা ফুটিয়েছে। ফলে প্রান্তিক খামারিরা করপোরেট কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে দেশের মোট ২৮টি সরকারি খামারের বেশির ভাগই অবকাঠামোগত দুরবস্থায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন হলে প্রান্তিক খামারিরা করপোরেট সিন্ডিকেটের শোষণ থেকে মুক্ত থাকতে পারতেন।
১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মিরপুর কেন্দ্রীয় খামারের ৩৪টি শেডের সাতটি অকেজো, আর সচল শেডগুলোতেও চলছে জরাজীর্ণ পরিবেশে কার্যক্রম। নষ্ট পলেস্তারা, স্যাঁতসেঁতে ঘর ও মরিচা পড়া চালার নিচেই চলছে ডিম ও বাচ্চা উৎপাদন। আরও বড় সমস্যা ইনকিউবেটর-এখানে ৫০ বছরের পুরোনো যন্ত্রে প্রতিটি বাচ্চা উৎপাদন খরচ পড়ছে প্রায় ৩২ টাকা, যা ক্রেতার কাছে ১৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। অন্যদিকে, করপোরেট খামারগুলো আধুনিক প্রযুক্তিতে কম খরচে উৎপাদন করে একই গ্রেডের একদিনের বাচ্চা বছরের অধিকাংশ সময় ৮০-১২০ টাকায় বিক্রি করছে। অর্থাৎ, সরকারি খামার থেকে করপোরেট খামারগুলো ৬৫-১০৫ টাকা উচ্চমূল্যে প্রতিটি বাচ্চা বিক্রি করছে। এ ব্যবধানের ফলে বাজারে সরকারি খামার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি সপ্তাহে দেড় কোটি ব্রয়লার বাচ্চা এবং ১৩-১৪ লাখ লেয়ার বাচ্চা উৎপাদন করছে। বিপরীতে মিরপুর কেন্দ্রীয় খামারের ছয়টি ইনকিউবেটরের চারটিই অকেজো, বাকি দুটিতে ৬০ হাজার ধারণক্ষমতা থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী গড়ে মাত্র ২৫ হাজার বাচ্চা উৎপাদন হয়।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডা. আনোয়ারুল হক বলেন, ‘ডিম উৎপাদনে খামারিদের খরচ হয় প্রায় ১০ টাকা ২০ পয়সা। কিন্তু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে তারা ন্যায্য দাম পান না। যদি সরকার নতুন খামারি তৈরিতে উদ্যোগ নিত এবং করপোরেট কোম্পানির বাচ্চা উৎপাদনের ওপর ১০ শতাংশ লভ্যাংশ নির্ধারণ করত, তবে এ অস্থিরতা কমত।’
কেন্দ্রীয় খামারের পরিচালক কৃষিবিদ জিনাত সুলতানা জানান, ‘৪৯ বছরের পুরোনো যন্ত্রপাতির কারণে উৎপাদন চাহিদা অনুযায়ী করা সম্ভব হচ্ছে না। শেডগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, তবে সীমিত সংস্কার চলছে। খরচ বেশি হলেও সরকার নির্ধারিত মূল্যে কম দামে ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করা হচ্ছে।’
সরকারি খামারগুলো মূলত প্রশিক্ষণ বেইজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দীর্ঘ অবহেলায় এগুলো কখনো করপোরেট কোম্পানির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেনি। ফলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে দিনদিন পোলট্র্রি শিল্পের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে।