নানা বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে হত্যার শিকার হলেন ২০ বছরের কিশোরী আরজু আক্তার (২০)। ধর্ষণচেষ্টায় বাধা দেওয়ায় তাকে কুপিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনা দেখে ফেলায় গলা কেটে জখম করা হয় আরজুর নানা-নানিকেও। তারা হলেন- আবদুল হাকিম (৭৫), ফরিদা বেগম (৬০)। তাঁদের আহত অবস্থায় প্রথমে চন্দনাইশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থা শঙ্কাজনক হওয়ায় দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গত মঙ্গলবার দিনগত রাত ২টার দিকে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ গাছবাড়িয়া নয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুল হাকিম ও ফরিদা বেগম একটি সেমিপাকা ঘরে থাকতেন। পাশে তিন তলা ভবনে তাঁর দুই ছেলের পরিবারের সদস্যরা থাকেন। গত বৃহস্পতিবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন হাকিম-ফরিদার নাতনি আরজু। তিনিও নানা-নানি যে ঘরে থাকেন, এর একটি কক্ষে থাকতেন। মঙ্গলবার রাতে সেখানে আসেন নাজিম উদ্দিন (২৮) নামে এক যুবক। তিনি আরজুর নানি ফরিদার বোনের ছেলে। তিনিও সেমিপাকা ঘরটিতে রাতে ঘুমাচ্ছিলেন।
আরজুর মামি ও আহত বৃদ্ধ দম্পতির ছেলের বউ রিমা আকতার বলেন, ‘রাতে চিৎকার শুনে ঘরে গিয়ে দেখি আমার শ্বশুর-শাশুড়ি রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছেন। আমাকে শাশুড়ি বলেন, নাজিম আমার নাতিকে কোথায় নিয়ে গেছে দেখ। এরপর আমরা আরজুকে খুঁজতে থাকি। একপর্যায়ে ঘরের শৌচাগারে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। আরজুকে গলা চেপে ও শ্বাসরুদ্ধ করে হয়তো খুন করা হয়েছে। তাঁর গলায় দাগ রয়েছে। মুখেও ওড়না গোঁজা ছিল।’ আরজুর বাড়ি উপজেলার কাঞ্চনাবাদ এলাকার এলাহাবাদ গ্রামে। তিনি উপজেলার একটি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। রিমা আকতার আরও বলেন, পরিবারের সদস্যরা ধারণা করছেন, হয়তো রাতে শৌচাগারে যাওয়ার সময় নাজিম কোনো কারণে আরজুকে শ্বাসরোধে খুন করেন।
আরজুর নানা-নানি এগিয়ে আসায় তাঁদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে পালিয়ে গেছেন। আহত ফরিদার অবস্থা শঙ্কাজনক বলে জানান তিনি। অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়ায়। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।
চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুজ্জামান বলেন, অভিযুক্ত নাজিম আরজুর মায়ের খালাতো ভাই। আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি মঙ্গলবার রাতে আরজুকে শ্বাসরোধে খুন করে নাজিম। তাকে বাঁচাতে এলে নানিকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। নানির চিৎকারে নানা এলে তাকেও কুপিয়ে জখম করে নাজিম। এরপর নাজিম তার খালা ফরিদা আক্তারের মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, নিহত তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিংবা ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। কী হয়েছে, সেটা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বোঝা যাবে। তরুণীকে মুখের ভিতর ওড়না ঢুকিয়ে শ্বাসরোধে মৃত অবস্থায় আমরা পেয়েছি। সুরতহাল শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।