পতিত স্বৈরাচার সরকারে সাবেক এমপি মির্জা আজম এবং তার স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে থাকা ১৯ বিঘা জমি জব্দ ও ৩১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব হিসাবে তিন কোটি ৮০ লাখ ২৩ হাজার ৯৫৮ টাকা রয়েছে।
সোমবার দুর্নীতি দমক কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জব্দ সম্পদের মধ্যে মির্জা আজমের নামে জামালপুরে সাড়ে ৫৯ শতক জমি জব্দ করা হয়েছে। এসব সম্পদের মূল্য ২৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া মির্জা আজমের নামে ১৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এসব হিসাবে ১ কোটি ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪ টাকা।
এছাড়া, মির্জা আজমের স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে জামালপুরে ১৭.৯২ বিঘা জমি জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া, তার নামে থাকা ১৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এসব হিসাবে দুই কোটি ৬৭ লাখ ২৭ হাজার ৯২৪ টাকা রয়েছে।
এদিন তাদের জমি জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক ফেরদৌস রহমান।
আবেদনে বলা হয়, মির্জা আজম এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রভাব খাটিয়ে নিজ নামে-বেনামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ টাকা এবং তার মেয়ে আফিয়া আজম অপির নামে তিন কোটি ৯৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেন। এসব সম্পদ নিজের দখলে রেখে, পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্যদের নামে ২০ কোটি ৭৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি হেবা বা দান বা বিনিময়ের মাধ্যমে হস্তান্তর ও রূপান্তর করেন।
এতে বলা হয়, নিজ নামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং তার স্ত্রীসহ তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৭২৫ কোটি ৭০ লাখ ৪২ লাখ ২৩২ টাকা জমা ও ৭২৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৩ হাজার ৭১৫ টাকা উত্তোলন করে অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে জ্ঞাতসারে তার অপরাধলব্ধ অবৈধ অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করে অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে দুদক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, মির্জা আজমের অর্জিত সব সম্পদ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে তদন্তকালে প্রাপ্ত তার নিজ নামীয় ও তার কন্যা মির্জা আফিয়া আজমের নামীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ (ব্যাংক হিসাব) যেন তিনি অন্যত্র হস্তান্তর ও স্থানান্তর করতে না পারেন, সেজন্য তার এসব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ (ব্যাংক হিসাব) অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।
দেওয়ার আলেয়ার আবেদনে বলা হয়, দেওয়ার আলেয়া তার স্বামী মির্জা আজমের প্রভাব খাটিয়ে এবং তার সহযোগিতায় নিজ নামে-বেনামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭১ হাজান ৯৯৫ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পত্তি দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেন। তা নিজের দখলে রেখে এবং তার নিজ নামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ১৮১ কোটি ৯৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা জমা ও ১৭৯ কোটি ২৬ লাখ ৯৬ হাজার ৪৯ টাকা উত্তোলন করে অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে জ্ঞাতসারে তার অপরাধলব্ধ অবৈধ অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন এজন্য দুদক তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
এতে আরও বলা হয়, আসামি দেওয়ান আলেয়ার অর্জিত সব সম্পদ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে তদন্তকালে প্রাপ্ত তার নিজ নামীয় ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এসব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ (ব্যাংক হিসাব) যেন তিনি অন্যত্র হস্তান্তর ও স্থানান্তর করতে না পারেন এজন্য স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ (ব্যাংক হিসাব) অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ৭২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর মির্জা আজম ও তার স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
বিডি প্রতিদিন/কেএ