বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন-অর-রশীদ (৭৭) বীরপ্রতীকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসের একটি কক্ষ থেকে। গতকাল দুপুরে ক্লাব গেস্ট হাউসের ৩০৮ নম্বর কক্ষ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগের দিন রবিবার বিকালে তিনি চট্টগ্রামে এসে ওই গেস্ট হাউসে উঠেছিলেন। তবে কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া হারুন-অর-রশীদের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নে। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতার জন্য তিনি বীরপ্রতীক খেতাব পান। ২০০০-২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। অবসর পরবর্তী সময়ে তিনি কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৬ সালে তিনি ডেসটিনি গ্রুপে যোগ দিয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে ডেসটিনি মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির সভাপতি প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, গ্রুপের একটি মামলার হাজিরা দিতে গত রবিবার বিকালে তিনি চট্টগ্রামে এসে চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে ওঠেন। গতকাল সকালে মামলার হাজিরা দেওয়ার জন্য সবাই যখন কোর্টে যান, তখন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে ফোনেও না পেয়ে গেস্ট হাউসে জানানো হয়। গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষ তাঁর কক্ষে গিয়ে দেখেন তিনি বিছানায় অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে সিএমএএইচের চিকিৎসকরা এসে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। চট্টগ্রাম ক্লাব লিমিটেডের সেক্রেটারি অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডার মো. আশরাফ উদ্দিন জানান, সকালে উনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর গাড়ি এসেছিল। এর মধ্যে তাঁকে ফোনে না পেয়ে পেছনের দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন গেস্ট হাউসের কর্মীরা। এ সময় তাঁকে বিছানায় শোয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়।
ঘটনাস্থলে যাওয়া সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের সদস্য, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেননি। চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল করিম বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, কিংবা কীভাবে কী হয়েছে সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি। বিকাল ৩টার দিকে তাঁর লাশ সেনাবাহিনীর অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম ক্লাব থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা চিকিৎসকরা ধারণা করেছেন, স্বাভাবিকভাবেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’ সাবেক এই সেনাপ্রধানের মৃত্যুর খবর শুনে তার স্বজনরা ছাড়াও মামলায় হাজিরা দিতে আসা ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনও চিটাগাং ক্লাবে ছুটে যান। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর আগেও আমরা এ মামলায় হাজিরা দেওয়ার জন্য কয়েকবার চট্টগ্রামে এসেছি। আমরা আজকে চলে যাব। কাল সকালে উনার ফ্লাইট বুক করা ছিল। এভাবে কথাবার্তা হয়েছে। এর মধ্যে কী হয়ে গেল।’
এদিকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে জানাজা শেষে বিকাল ৫টার দিকে সাবেক এই সেনাপ্রধানের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সেনাবাহিনীর প্রটোকল এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ‘গার্ড অব অনার’র ছাড়াই হাটহাজারীতে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয় বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির স্টাফ অফিসার মেজর শিহাব।