মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছায়। এরপর ইরান কাতারের আল-উদেইদে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালালে বিশ্ববাজারে উত্তেজনা আরও বাড়ে। তবে এরপর ইরান সাময়িকভাবে আক্রমণ স্থগিত রাখায় এবং স্ট্রেইট অব হরমুজ বন্ধ না করায় তেলবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।
তেলের দাম হ্রাস
মঙ্গলবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৫.৬ শতাংশ কমে ৬৬ ডলার প্রতি ব্যারেলে নেমে আসে। যদিও আগে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, স্ট্রেইট অব হরমুজ বন্ধ হলে দাম ১০০ ডলার ছাড়াতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে বিশ্ববাজারে বড় ধাক্কা লাগতে পারে, কারণ এই জলপথ দিয়েই বিশ্বের ২০ শতাংশ জ্বালানি তেল সরবরাহ হয়। যদিও ইরানের সংসদ প্রণালীটি বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ওপর নির্ভর করছে।
হরমুজ প্রণালী বন্ধের ভয়
ইরান অতীতে (২০১৮ সালে) এমন হুমকি দিয়েছে এবং ৮০’র দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধেও সমুদ্রপথে খনির বিস্তার ও জাহাজ আটকানোর মতো পদক্ষেপ নিয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত ইরান সেসব পথে যায়নি।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো রবিন ব্রুকস বলেন, “যদি ইরান সত্যিকারের প্রতিশোধ নিতে চাইত, তবে তারা হরমুজে একটি তেল ট্যাংকার ডুবিয়ে দিত। সেটি না করায় বোঝা যাচ্ছে তারা আপাতত পিছু হটেছে।”
অতিরিক্ত সরবরাহের বিকল্প
বিশ্ববাজারে ঘাটতি এড়াতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলিয়ে দৈনিক ২.৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল অতিরিক্তভাবে সরবরাহ করতে সক্ষম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, কানাডা এবং গায়ানাও সরবরাহ বাড়াতে পারে। তবে এসবের বেশিরভাগই দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি প্রয়োজন।
ইরান বিশ্বের ৪ শতাংশ তেল উৎপাদন করে, যার ৯০ শতাংশ রপ্তানি হয় চীনে। চীন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির চাপে রয়েছে, তাই তেলের দামে হঠাৎ বৃদ্ধি তাদের অর্থনীতিকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
চীনের ভূমিকা ও ট্রাম্পের বার্তা
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার Truth Social-এ লিখেছেন, “সকলকে বলছি—তেলের দাম নিচে রাখো, আমি নজর রাখছি।” চীনকে ইরানি তেল কেনার অনুমতি দেওয়ার কথাও বলেন তিনি, যা আগে বন্ধ ছিল।
এদিকে, ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোর আশপাশ থেকে বিদেশি তেল কোম্পানিগুলোর কর্মীরা সরানো হচ্ছে। BP এর রুমাইলা তেলক্ষেত্রের উৎপাদন অব্যাহত থাকলেও কর্মী সংখ্যা কমানো হয়েছে।
সামনে কী হতে পারে?
বিশ্ব জ্বালানি বাজার একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। OPEC ইতিমধ্যে জুলাই মাসে উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভে রয়েছে ৪০২.৫ মিলিয়ন ব্যারেল, যা সংকটে ব্যবহার করা হবে।
তবে এই রিজার্ভ পুনরায় পূরণ করতে খরচ হবে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার এবং এতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞ পিটার ম্যাকন্যালি বলেন, “যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যদি সরবরাহে ঘাটতি হয়, সবচেয়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দিতে পারবে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাষ্ট্র।”
সূত্র: আল জাজিরা
বিডি প্রতিদিন/আশিক