মিয়ানমারে মাত্র ছয় বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ—একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা আছে। শিশুটির মা-বাবাসহ মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার’-এর খবরে বলা হয়েছে, গত মাসের শেষ দিকে দেশজুড়ে চারটি ভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ১৩ জন পুরুষ ও ৩ জন নারীকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ৬ বছর বয়সী লিন লাট শোয়ে। তার বাবা মিও কো কো-কে এই হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যম জানায়, শিশুটি ও তার বাবা-মাকে কেন্দ্রীয় শহর বাগান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে একটি অপ্রচলিত সশস্ত্র সংগঠন, গোল্ডেন ভ্যালি ওয়ারিয়র্স। তারা জানায়, নিহত ৬৮ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল চো তুন অং সেনাবাহিনীর নানা নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। গত ২২ মে, রাজধানী ইয়াঙ্গুনে নিজ বাসার সামনে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
তবে স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ‘ইরাবতি’ জানায়, গোল্ডেন ভ্যালি ওয়ারিয়র্স দাবি করেছে—গ্রেফতার হওয়া ১৬ জনের কেউ তাদের সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
অন্যদিকে, আটক হওয়াদের মধ্যে একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিকও রয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, অভিযুক্ত হত্যাকারীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ওই হাসপাতাল সহায়তা করেছিল।
নিহত চো তুন অং মিয়ানমারের জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ দমন বিষয়ক প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ফেসবুকে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে গোল্ডেন ভ্যালি ওয়ারিয়র্স জানায়, তার কর্মকাণ্ড সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল।
উল্লেখযোগ্য যে, ২০২১ সালে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দিয়ে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকেই দেশটিতে ছড়িয়ে পড়ে গৃহযুদ্ধ। এই প্রেক্ষাপটে সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর একের পর এক টার্গেট করে হামলা চালানো হচ্ছে। শুধু সক্রিয় সেনা কর্মকর্তারাই নয়, বরং অবসরপ্রাপ্ত সেনা, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসক, সামরিক বাহিনীর অর্থনৈতিক অংশীদার এবং সন্দেহভাজন গুপ্তচররাও আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
কিন্তু এবার মাত্র ছয় বছর বয়সী এক শিশুকে গ্রেফতার করায় দেশ-বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন—এ ধরনের অভিযানে শিশুদের টানার যৌক্তিকতা কী? এটি কি নিছক দমন-পীড়নের আরেকটি উদাহরণ নয়?
সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দেশটির জনগণের প্রতিরোধ যতই জোরালো হচ্ছে, সরকারি প্রতিক্রিয়াও ততটাই কঠোর ও বিতর্কিত হয়ে উঠছে, যার সর্বশেষ নজির এই শিশু গ্রেফতারের ঘটনা।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল