ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তৎপরতায় ‘সন্দেহ’ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে রোডম্যাপ ঘোষণার আগেই ইসির নানা তৎপরতা নিয়ে সাংবাদিকদের এ সন্দেহের কথা জানান তারা।
গতকাল সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে প্রথম বৈঠকের পর নির্বাচন ও ইসি নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন এনসিপির নেতারা। এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের এ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক অনীক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও তাজনূভা জাবীন। বৈঠকে ভোটের আগে আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন দলের নিবন্ধন, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন প্রস্তুতি, ভোট কেন্দ্র স্থাপন, ভোট কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত নিয়ে ইসি যে কর্মপরিকল্পনা করছে, তাতে সাংবিধানিক সংস্থাটিকে ‘সতর্ক করেছে’ দলটি। বৈঠক শেষে ইসির এসব তৎপরতার সমালোচনা করেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা অনেক কথা ইসি থেকে শুনতে পাই। যেগুলো আমাদের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুনিনি। রোডম্যাপের কথা শুনিনি, ইসি থেকে এসেছে। এ জন্য আমরা বলব, কোনো জায়গায় কথা বলার জন্য ইসি নিজেদের জায়গায় সতর্ক থাকবেন। বরং এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা যে সময়সীমা জানিয়ে দিয়েছেন, ইসি সে বিষয়ে কাজ ‘শুরু করতে পারে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পাটওয়ারী বলেন, দুই ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে মনোনয়নপত্র সশরীরে জমা দেওয়া, দল নিবন্ধন নবায়ন এবং দল নিবন্ধনের সময় বাড়ানো, ঋণখেলাপি ও হলফনামায় ভুল তথ্য দিলে সদস্যপদ বাতিলসহ অন্তত দশটি দাবি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে তুলে ধরেছে এনসিপি। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন, আইন সংস্কারসহ অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে দলের প্রতিনিধিরা। ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন আসার পর তা বাস্তবায়নে জোর দিয়েছে নতুন দলটি। তবে বৈঠকে ভোটের সময়কাল নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানান পাটওয়ারী।
ইসি পুনর্গঠন নির্ভর করে ঐকমত্য কমিশনের ওপর : এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, সংস্কারের মাধ্যমে যেন নতুন নির্বাচন আসে, জনদাবির মুখে ইসি যেন ‘সেদিকে ধাবিত হয়’ সেটি তারা বলেছেন। মৌলিক সংস্কারসহ ইসির পুনর্গঠন চেয়েছেন তারা। এ সময় বর্তমান ইসির প্রতি আস্থা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বরাবরই বলেছিলাম, ২০২২ এর যে আইন (সিইসি ও ইসি নিয়োগ) বিএনপিও বিরোধিতা করেছিল, সব দলই বিরোধিতা করেছিল, ফ্যাসিস্ট সরকার সে নিয়মগুলো বানিয়েছিল।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন চায় এনসিপি : বৈঠকে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জোর দিয়েছে এনসিপি। পাটওয়ারী বলেন, ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট যখন ফাইনাল হয়ে আসবে, তখন সরকার প্রতিটি সাংবিধানিক কমিশনে পাঠাবে। ওই সিদ্ধান্ত যেন বাস্তবায়ন হয়।
তিনি বলেন, ইসি নিত্যকার কাজগুলো করতে পারে। অভ্যন্তরীণ কাজগুলো করতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের ফুলফেইজের কাজে যাবে সে বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের যে ফাইনাল রিপোর্ট আসবে- তার মতো হওয়া উচিত বলে মনে করি। এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ডেমোক্র্যাটিক পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য ইলেকশন রিফর্ম অতি জরুরি। বর্তমানে যে প্রক্রিয়া রয়েছে, ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টটা আসার পর, সিদ্ধান্তগুলো হওয়ার পর সে অনুযায়ী ইসি পরিচালিত হয়- তাহলে বাংলাদেশে সুন্দর নির্বাচন হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের জানিয়েছিলাম, সংস্কারের প্রত্যেকটি রিপোর্টের পাতা বাই পাতা, ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড, প্রয়োগের মধ্য দিয়ে আগামী একটি নির্বাচনে যেতে হবে।