বিশ্বের দশম সর্বোচ্চ পর্বত অন্নপূর্ণা। পর্বতারোহী বাবর আলী বলেন, ‘৬ হাজার ৪০০ মিটার থেকে আমি যাত্রা করি। ১ হাজার ৭০০ মিটার পথ ভাঙতে হয়েছে। সাড়ে ১৭ ঘণ্টা সময় লেগেছে চূড়ায় পৌঁছাতে। ৬ এপ্রিল বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে পর্বতে উঠতে শুরু করি। ৭ এপ্রিল সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে চূড়ায় পৌঁছি। নন স্টপ ১৭ ঘণ্টা পর্বতারোহণ। চূড়ায় মাত্র ৫ মিনিটের বেশি থাকার সাহস করিনি। চূড়ায় মাত্র দুজন লোক দাঁড়াতে পারেন। আমার গাইডের ফোন পড়ে যায় চূড়া থেকে। তবে এভারেস্টের চূড়ায় আমি অনেকক্ষণ ছিলাম।’ গতকাল চট্টগ্রাম নগরের আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে অন্নপূর্ণা-১ সামিট করে ফেরা পর্বতারোহী বাবর আলী নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে হবে শত্রুপক্ষের এমন একটা করিডর দিয়ে যাচ্ছি, যেখানে দুই পাশ থেকে মেশিনগান দিয়ে গুলি করছে। আপনি এঁকেবেঁকে যাচ্ছেন, ওপর থেকে পাথর খসে পড়ছে। ফেরার সময় আমার ভারী বুট থাকায় আমি বেঁচে গিয়েছিলাম। রকফলে পড়েছিলাম।’ বাবর আলী বলেন, ‘সমতলের দূষণের প্রতিফলন ঘটছে পর্বতে। নেপালের একটি পর্বতে এখন তুষারই নেই। হ্রদ তৈরি হচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বাইরে নয় পর্বত। তরুণদের তিনটি এম- মাসল, মাইন্ডসেট এবং মানি থাকলে পর্বতারোহণ সম্ভব। ধাপে ধাপে যেতে হবে। সিঁড়ির কোনো ধাপ বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। ধীরে ধীরে এগোতে হবে। পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে সব ধাপ পেরোনো সহজ।’ তিনি বলেন, ‘অন্নপূর্ণা সামিটে আমাদের দলে চারজন ছিলাম। বাকি তিনজন সামিট করতে পারেনি। একজনকে হেলিকপ্টারে রেসকিউ করতে হয়েছে। আমি ভাগ্যবান। অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছি। প্রথম যিনি এ পর্বত সামিট করেছিল তার হাত পায়ের সব আঙুলের ডগা হারিয়েছিলেন। আমিও খুব সচেতন ছিলাম। এক সময় আমার এ আঙুল খুব কালো হতে শুরু করেছিল। আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। ভাগ্য ভালো খারাপ কিছু হয়নি। এ পর্বত খুব তুষারধস প্রবণ। এ বছরটাকে বলা হচ্ছে অন্নপূর্ণার সবচেয়ে ভালো সিজন। কারণ কম পরিমাণে তুষারপাত হয়েছে। আমরা যখন সামিট করছি তখন প্রচুর তুষারপাত শুরু হলো। ঝুঁকি বাড়ল। নীল বরফ ছিল পাথরের চেয়েও শক্ত। ২০২৩ সালে রাজস্থানের এক ছেলে অন্নপূর্ণার তুষার ফাটলে আটকা পড়েছিলেন। তিন দিন আটকা ছিল। তার বেঁচে ফেরাকে মিরাকল বলা হয়।’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের পরিচালক ব্রুনো লাক্রামপ, ভিজুয়াল নিটওয়ারসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ নূর ফয়সাল, ভার্টিকাল ড্রিম ক্লাবের সভাপতি ফরহান জামান প্রমুখ। প্রসঙ্গত, এর আগে বাবর ২০২২ সালে ৭ হাজার ফুট উচ্চতার পর্বত সামিট করেন বাবর। ২০২৪ সালে এভারেস্ট ও লোৎসে সামিট করেন।