ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে করতে হলে অক্টোবরে তফসিল করতে হবে। অক্টোবরের মধ্যে আইন-কানুন, বিধিবিধান সংস্কার শেষ করতে হবে বলে মনে করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। আগামী নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গতকাল সিইসি নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন আরএফইডি আয়োজিত অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন। এ সময় তিনি নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন দল নিবন্ধনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
নির্বাচনিব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অন্তত তিন বিষয়ে সুপারিশ নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন সিইসি। সংস্কার কমিশনের সুপারিশে অনেক সুপারিশ আছে, যেগুলো বাস্তবায়িত হলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা খর্ব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কম সংস্কার চাইলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন। আরেকটু বেশি সংস্কার চাইলে ২০২৬ সালের জুনে জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমার কথা প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, ডিসেম্বরে ভোট করতে গেলে অক্টোবরে তফসিল করতে হবে। এই সময়ের মধ্যেই আইন-কানুন, বিধিবিধান সংস্কার শেষ করতে হবে। তিনি বলেন, মে-জুন বর্ষাকাল থাকে। বর্ষাকালে অতীতে নির্বাচন করতে দেখা যায়নি। নির্বাচনের দেড়-দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। তার মানে অক্টোবর পর্যন্ত সময় আছে।
এদিকে নির্বাচনিব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অন্তত তিন বিষয়ে সুপারিশ নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন সিইসি।
বিশেষ করে বিদায় নেওয়ার পর সংসদীয় স্থায়ী কমিটির হাতে ইসির বিষয়ে তদন্ত ভার, সীমানা পুনর্নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা নিয়ে স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ করার সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে ইসির স্বাধীনতা খর্ব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ইসিকে দায়বদ্ধ করার জায়গা তৈরির সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। তবে ইসির দায়বদ্ধতা তৈরির জায়গাটিকে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে মনে করছেন সিইসি। সিইসি বলেন, সংসদীয় কমিটিকে ক্ষমতা দিলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা খর্ব হবে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারব না। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচন কমিশন স্থায়ী কমিটির কাছে নির্ভরশীল হতে চায় না। সিইসি বলেন, সংসদীয় আসনে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আমরা অর্ধশত আবেদন পেয়েছি। আইনে কিছু বাধা রয়েছে। এ জন্য আমরা এর সমাধান করতে পারছি না। এই আইনের সংশোধন প্রয়োজন। তা না হলে আমরা আটকে যাচ্ছি। তিনি বলেন, নতুন দলের নিবন্ধন সময়সাপেক্ষ বিষয়। ভোটের জন্য অনেক কেনাটাকা রয়েছে। আমরা চাইলে রাতারাতি অনেক কিছু কিনতে পারি না। আমরা চেয়েছিলাম ভোটার রেজিস্ট্রেশনের পাশাপাশি এই কাজগুলো এগিয়ে নিতে। কিন্তু আইনি বাধার কারণে আমরা এগুলো করতে পারছি না।
সিইসি বলেন, আমরা ওই দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করব, যেদিন পর্যন্ত শুধু আওয়ামী লীগ নয়, যাদের নিবন্ধন থাকবে তারাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। কে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বা পারবেন না, সেটা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত নয়, এটা সরকারের সিদ্ধান্ত।
সিইসি জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যেমনভাবে পার্লামেন্টারি ইলেকশন হবে, কেয়ার গভর্মেন্ট না থাকলেও লোক গভর্নমেন্ট ইলেকশনটাও কোয়ালিটি ইলেকশন হবে যদি ইসির স্বাধীনতা অক্ষুণœ থাকে। সুন্দর ইলেকশন হবে।
সংস্কার কমিশনের কয়েকটি সুপারিশ ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে জানিয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তাদের সম্মানি ভাতার বিষয়ে রিভিউ করার কমিটি করা হয়েছে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইসির অধীনের আনার সুপারিশ করেছে। ইতোমধ্যে খুব দ্রুত ইসির অধীনে আনতে সরকার পূর্ণ সমর্থন দিয়ে তা করে দিয়েছে। ইসির অধীনে যত মিটিং, ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ, সেমিনারে কোনো সম্মানিভাতা নেবেন না সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনার। বলতে গেলে তিনটি সুপারিশ অলরেডি বাস্তবায়ন করে ফেলেছি।