যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্য উত্তেজনা বিরাজ করছে। এমন প্রেক্ষাপটে আবারও দুই দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনার টেবিলে বসতে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী সোমবার (৯ জুন) লন্ডনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট, বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার চীনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে লন্ডনে বৈঠক করবেন।’
ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে প্রায় ৯০ মিনিটের একটি ফোনালাপের পর এই ঘোষণা এসেছে। আলোচনার পর ট্রাম্প আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, চলমান বাণিজ্য সংকটের একটি সমাধান এবার হতে পারে। উল্লেখ্য, গত ১২ মে জেনেভায় অনুষ্ঠিত শেষ বৈঠকে দুই দেশ উচ্চহারে ধার্যকৃত শুল্ক হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেয়, যা বৈশ্বিক বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়, মার্কিন ভোক্তা আস্থাও বাড়ে।
তবে এরপর পরিস্থিতি আবার জটিল হয়ে পড়ে। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, চীন পূর্বের চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং তাদের সঙ্গে একটি ‘দ্রুত সমঝোতা’ করেও প্রতারণার শিকার হতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মিস্টার নাইস গাই হওয়া দিয়ে কিছু হয় না।’
চীনও পাল্টা অভিযোগ করে বলে, যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে নতুন নতুন শুল্ক ও বাণিজ্য বাধা তৈরি করছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও অনিশ্চয়তায় ফেলছে।
বৈঠকের আগের দিনগুলিতে যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেয়। হুয়াওয়ের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন চিপ ব্যবহার না করতে আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করা হয়। এছাড়া চীনা শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু ভিসা বাতিলের ঘোষণাও আসে।
তবে সাম্প্রতিক ট্রাম্প-জিনপিং ফোনালাপের পর কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, চীন সীমিত পরিসরে হলেও বিরল খনিজ উপকরণের রপ্তানির অনুমতি দিতে শুরু করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লন্ডনের এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মার্কিন অর্থনীতি আপাতদৃষ্টিতে স্থিতিশীল থাকলেও ভেতরে ভেতরে চাপ বাড়ছে। আর কেউই চায় না এপ্রিলের মত আরেকটি সংকটে পড়তে। উল্লেখ্য, এপ্রিলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
ট্রাম্পের ঘোষণার পর ওয়ালস্ট্রিটে তাৎক্ষণিকভাবে পুঁজিবাজার সূচক বেড়ে গেছে। ডাও জোন্স ৪৫০ পয়েন্ট, এসঅ্যান্ডপি ১.২% এবং নাসডাক ১.৩% বেড়ে যায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, আলোচনায় অগ্রগতি হলে বৈশ্বিক বাজারে আরও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল