গাইবান্ধায় পারিবারিক বিষয় নিয়ে সালিশে ডেকে নিয়ে পত্রিকা বিক্রেতা ময়নুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্য সৈয়দ মোস্তফা জামান মিন্টু ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এতে ময়নুলের পরিবারে ৮ জন সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর ইসলাম তালুকদার।
এর আগে, রবিবার রাত ১১টার দিকে গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের রথবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে সোমবার সকালে মামলা করা হয়।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য সৈয়দ মোস্তফা জামান মিন্টু ওই ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও সহযোগীরা ওই এলাকার বাসিন্দা এবং তার আত্মীয়স্বজন।
আহতরা হলেন-পত্রিকা বিক্রেতা ময়নুলের ভাতিজা শফিকুল ইসলাম সোলেমান ও আব্দুস সাত্তার, চাচা দেলোয়ার হোসেন, ভাই রেজাউল মিয়া ও মজনু মিয়া। তারা সকলেই গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকি তিনজন স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে আছেন। এ ঘটনায় ইউপি সদস্য সৈয়দ মোস্তফা জামান মিন্টুসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০ থেকে ১১ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা করেছেন পত্রিকা বিক্রেতা ময়নুল।
আসামিরা হলেন-ওই ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া এলাকার সৈয়দ মতিয়ার রহমানের ছেলে ইউপি সদস্য সৈয়দ মোস্তফা জামান মিন্টু (৫৫), মৃত নুরুজ্জামানের ছেলে মন্টু মিয়া (৫৫), তার ছেলে আশা মিয়া (২৫), মৃত আবু ফকিরের ছেলে আসাদুজ্জামান (৫০), সাজেদুল ইসলাম (৪৫), রাব্বী মিয়া (৩৫), আসাদুজ্জামানের ছেলে রুহিন মিয়া (৩০), রুবেল মিয়া (২২), রিফাত হোসেন (২০), হারুন অর রশিদের ছেলে রোমান (২৭), মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে পাভেল মিয়া (৩২), মৃত নুরুজ্জামানের ছেলে মিনু মিয়া (৪৫), টিটু মিয়া (৪২), আতাহার আলীর ছেলে রাশেদুল মওলা নবীন (৩৫), নওশাদের ছেলে নিশাত (২২) ও লিটন (২৮), লাল মিয়ার ছেলে কামাল মিয়া (২১), সিদ্দিক মিয়ার ছেলে মোজাফফর মিয়া (৪০), আব্দুল বারীর ছেলে রিজু হোসেন (২৮), দুলু মিয়ার ছেলে রওশন (২৫), জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে উলফাত (৩০), আলতাফের ছেলে মমিনুল (৪২), আজাহার ভুলুর ছেলে বরাত (২৭) ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১১ জনকে আসামি করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পারিবারিক বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে পার্শ্ববর্তী দুই পরিবারের বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধ মীমাংসায় রবিবার রাত ১০টার দিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য সৈয়দ মোস্তফা জামান মিন্টুর সভাপতিত্বে রথবাজারে তার ব্যক্তিগত অফিস ঘরে সালিশ বসে। এতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন। সালিশ চলাকালীন আসামিরা উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। তখন পত্রিকা বিক্রেতা ময়নুলের পক্ষের সকলে গালিগালাজ করতে নিষেধ করে। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয় ইউপি সদস্য সৈয়দ মোস্তফা জামান মিন্টুসহ তার পক্ষের লোকজন। আসামিরা পূর্বপরিকল্পিত সালিশ ঘরের শাটার নামিয়ে লাঠি, লোহার রড, ধারালো ছোরা দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট করে রক্তাক্ত জখম ও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় শফিকুল ইসলামের প্যান্টের পকেটে থাকা ব্যবসার ৪০ হাজার ৫০০ টাকা বের করে নেয়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে। এসময় আসামিরা খুন, গুমসহ বিভিন্ন হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে আহতদের গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভার্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য সৈয়দ মোস্তফা জামান মিন্টুর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পত্রিকা বিক্রেতা ময়নুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমি পত্রিকা বিক্রি করে আসছি। কারো সাথে কোনো বিরোধ নাই। মানুষ আমাকে বিপদে ফেলে দিল। আমি এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর ইসলাম তালকুদার বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই