রংপুরে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বসতবাড়ির আশপাশে থাকা পুকুর, ডোবা, নালাতে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা। অভিভাবকদের অসচেনতা এর প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
ফায়ার সাভিস ও সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, এক বছরে মৃত্যু দেড় শতাধিক হলেও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর। কারণ সব মৃত্যু ফায়ার সার্ভিস অথবা স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানো হয় না।
জানা গেছে, গত ১৬ জুন রংপুরের পীরগাছায় পৃথক স্থানে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। নিহতরা হলো, ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব গ্রামের মাইদুল ইসলামের মেয়ে মেধা আক্তার (৮) ও পারুল ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা মুন্নী খাতুন (১২)। এর আগে গত ২৭ এপ্রিল রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের উত্তর দাদন এলাকায়বাড়ীর পাশে গর্তের পানিতে ডুবে নুর ইসলাম নামে দুই বছরের এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গতবছর ২৬ জুন পৃথক ঘটনায় পানিতে ডুবে মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ এলাকায় ঘাঘট নদীতে ও নগরীর ভুরারঘাট এলাকায় একই নদীতে ডুবে মোট চার জনের মৃত্যৃ হয়।এছাড়া একই দিন সকালে মিঠাপুকুরের বড়বালা এলাকায় পুকুরের পানিতে ডুবে আরও এক শিশুর মৃত্যু হয়।
রংপুর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত জেলার পাঁচ উপজেলায় পানিতে ডুবে ১১১ জন শিশুর মৃৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। পানিতে পড়া যে সব শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় সেই সব শিশুর মৃত্যুর সংখ্যাই কেবল রেকর্ড করা হয়। যেসব শিশু পানিতে ডুবে মারা যায় তাদের অনেককেই হাসপাতালে আনা হয় না। ফলে পানিতে পড়ে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা দুই শতাধিক ছাড়িয়ে যাবে বলৈ মনে করা হচ্ছে।
এদিকে রংপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত রংপুর বিভাগে পানিতে ডুবে নিখোঁজের সংখ্যা ৩৫ জন এবং ফায়ার সর্ভিসের ডুবুরি উদ্ধার করেছে ১৯ জনকে। বাকিদের ফায়ারর্সার্ভস উদ্ধার করতে পারেনি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রংপুরের সহকারী পরিচালক মোঃ আনোয়ারুল হক বলেন, আগের দিনে মায়েরা তাদের সন্তাানদের বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন ছিলেন। তারা শিশুদের সার্বক্ষণিক অবস্থান জানার জন্য কোমরে ঝুনঝুনি পরিয়ে দিত। আধুনিক যুগের অনেক মায়েরা বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে শিশুদের সময় দিতে পারেন না। শিশুরা কোথায় যায় অভিভাবকরা জানেন না। ফলে পানিসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা.শাহীন সুলতানা জানান , পানিতে পড়া বেশিরভাগ শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই মারা যায়। পাঁচ মিনিটের মতো পানিতে ডুবে থাকলেই শিশুর মৃত্যু হয়। মৃত অবস্থায়ই বেশির ভাগ শিশুকে হাসপাতালে আনা হয়। আবার অনেক মৃত শিশুকে হাসপাতালে আনা হয় না। হাসপাতালে যেসব শিশুকে আনা হয় শুধু তাদের নামই রেকর্ড করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/এএম