চার্জার ভ্যানে ছোট মাইক লাগিয়ে গানের সুর ও ছন্দে নিজের তৈরি বাঁশের পণ্য বিক্রি করছেন মাহালি মাইকেল মার্ডি। চার্জার ভ্যান বোঝাই বাঁশের বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ছোটেন তিনি। এখান থেকে পাওয়া অর্থেই চলে তার সংসার।
তাঁর ভ্যানে রয়েছে বাঁশের তৈরি কবুতরের ঘর, ঝাড়ু, বিয়ের ডালা, রঙিন কূলা, মুরগির খাঁচা, মুরগির ঝাপা, রুটির ডালা, আটা রাখার ধামা, ভাত ঢালা ধামা, খৈ চালা, বারুন, সরপেশের ঢাকনা, ডালি, পানের ডালা ইত্যাদি। এগুলো আগে বিভিন্ন হাটবাজারে বসে বিক্রি করতে মাইকেল মার্ডি। বর্তমানে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেশি হওয়ায় হাট বাজারে বসে তেমন বেচাকেনা হয় না। দিন দিন এর চাহিদা কমে যাচ্ছে। তাই এভাবে বিক্রি করেন।
মাইকেল মার্ডি (৪০) জেলার বিরামপুর পৌরশহরের ৭নং ওয়ার্ডের চাঁদপুর মাহালিপাড়ার জোসেফ মার্ডির ছেলে। দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানসহ স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর বসবাস। তার বাবা ও মা বর্তমানে সরকারের দেওয়া ঘরে খাঁনপুর ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রামে বাস করেন। বড় মেয়ের বিয়ে দিলেও সংসারে বোঝা টানতে গিয়ে ছোট মেয়ে মেঘনা মার্ডি ও ছেলে সাগর মার্ডির পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি তার। সারাদিন ছেলে সন্তান ও স্ত্রীর হাতের তৈরি বাঁশের বিভিন্ন জিনিসপত্র বাজারজাতকরণে ভ্যান নিয়ে ছুটে চলেন মাইকেল মার্ডি।
মাইকেল মার্ডি তাঁর অটো চার্জার ভ্যানে তৈরি বাঁশের বিভিন্ন জিনিসপত্র সাজিয়ে প্রতিদিন সকালে বের হয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেন। তবে বছরের ধান কাটা মৌসুমে গ্রামের অলিগলিতে ঘুরে তার বেচাকেনা ভালো হয়। কিন্তু এই উপার্জন দিয়ে সংসারের সদস্যদের মুখে ভালোভাবে হাসি ফোটাতে পারেন না কখনো।
তিনি জানান, অন্য কোন কাজকর্ম জানিনা। বাপদাদার ও জাতিগোষ্ঠীর আদি পেশা হিসেবে এই কর্ম ছাড়া কোন কিছুই করতে পারি না তাই কষ্ট হলেও এই পেশা ধরে রেখেছি।
মাইকেল মার্ডি আরও জানায়, একটি বাঁশ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনে ১ দিনে ২ টি খাঁচা তৈরি করেন। পরবর্তীতে ২ টি খাঁচা ৪০০ থেকে ৫০০টাকায় বিক্রি করে তার ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয় হয়। এই টাকাকে ২ দিনের মজুরি হিসেবে ভাগ করলে পড়ে ১০০ থেকে ১২৫টাকা। তিনি বলছেন, আমরা ২ জন মানুষ পরিশ্রম করে দুইশত থেকে ২৫০ টাকা দিয়ে সংসার খরচ চালানো কষ্টকর।
মাইকেল মার্ডি আরও জানান, দিন দিন বাঁশের তৈরি কুটির শিল্প পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় হাট-বাজারে তেমন বেচাকেনা হয় না। অটো চার্জার ভ্যানে করে অল্প সময়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ও গ্রামের অলিগলিতে কুটির শিল্পপণ্যের বাজারজাতকরণে বিক্রি বেড়েছে। এতে অল্প সময়ে বেচাকেনা বেশি হয়ে থাকে। কষ্ট করে কিস্তি ও প্রতিবেশীর সহযোগিতায় এই অটো চার্জার ভ্যান কিনেছেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল