৫২-র ভাষা আন্দোলনে মাতৃভাষাকে সমুন্নত রাখার জন্য যে কয়জন অকুতোভয় ভাষা শহীদ জাতির জন্য আত্মোৎসর্গ করে গেছেন, তাদের মধ্যে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার সালামনগরের (লক্ষনপুর) আবদুস সালাম অন্যতম। বর্ষ পরিক্রমায় ২১ ফেব্রুয়ারি আসে- যায়। কিন্তু বাংলা বর্ণমালার জন্য ভাষা শহীদ সালামের আত্মাহুতি শুধু বিশেষ দিন ছাড়া স্মরণ করা হয় না। শহীদের জন্মস্থানে আহামরি কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
এভাবেই বছরের পর বছর অব্যবস্থাপনা আর অবহেলার শিকার ভাষাশহীদ আবদুস সালামের স্মৃতি রক্ষায় নির্মিত ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার সালাম স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। দীর্ঘদিন ধরে নতুন বই সংযোজন না হওয়া, প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং নানা অব্যবস্থাপনার কারণে এটি এখন পাঠক ও দর্শনার্থী শূন্য। শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এখানে কিছু আনুষ্ঠানিকতা হয়, বাকি সময় এটি প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।
সরেজমিন দেখা গেছে, গ্রন্থাগারের আলমারিতে ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য, ধর্ম, কবিতা, উপন্যাসসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনেক বই থাকলেও বেশিরভাগই পুরনো। ২০১৮ সালের পর থেকে নতুন বই সংযোজন হয়নি, ফলে পাঠকদের আগ্রহ কমে গেছে। গত বন্যায় আসবাবপত্র ও আলমিরাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন পর্যন্ত সেগুলো মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বইগুলো টেবিলের ওপর এলোমেলোভাবে পড়ে থাকায় চুরির আশঙ্কাও রয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা বই পড়তে আসি। কিন্তু পুরনো বইয়ের কারণে পড়ার আগ্রহ কমে গেছে। বন্যার পর আসবাবপত্র নষ্ট হলেও তা এখনো ঠিক করা হয়নি।’
এম কাওছার নামে এক দর্শনার্থী বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি ছাড়াও যেন এটিকে আরও জাঁকজমক করা যায়, সেজন্য একটি শিশু পার্ক স্থাপন করা যেতে পারে।
জাদুঘরের লাইব্রেরিয়ান লুৎফুর রহমান বাবলু জানান, ‘এখানে ভাষা শহীদের স্মৃতিচিহ্ন বলতে কেবল একটি ছবি রয়েছে। বছরের প্রায় পুরো সময়ই এটি পাঠকশূন্য থাকে। গত বছর বন্যায় সাতটি আলমিরা নষ্ট হয়েছে, বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’
দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স.ম. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ফেনী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মো. বাতেন বলেন, ‘আমি সরেজমিন সালামনগর স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার পরিদর্শন করেছি। দ্রুত বইয়ের র্যাক, আলমিরা ও ক্ষতিগ্রস্ত আসবাবপত্র পুনঃস্থাপন করা হবে। ভবিষ্যতে এটি ডিজিটাল লাইব্রেরিতে রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।’
ভাষা শহীদ আবদুস সালাম ফেনী জেলার দাগনভূঞাঁ উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সালামের নাম অনুসারে লক্ষণপুরের নাম সালামনগর রাখা হয়। তার পিতার নাম মোহাম্মদ ফাজিল মিয়া। মাতার নাম দৌলতের নেছা। তিনি স্থানীয় মাতুভূঁঞা করিম উল্যা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মাতৃভাষা ‘বাংলা চাই’ স্লোগানে রাজপথে নামলে ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে আহত হন সালাম। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই