মাত্র একটি বাড়ি নিয়েই গড়ে উঠেছে একটি গ্রাম। আর সেই বাড়িতে বসতি রয়েছে ১০টি। সব মিলিয়ে তাদের সদস্য সংখ্যা ৩২ জন। ৬০ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ গ্রামটি এখন সারাদেশের আলোচনায় রয়েছে।
গ্রামটিতে নেই স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, বাজার এমনকি কোনো রাস্তাঘাট। স্কুল ও বাজার করতে যেতে হয় দুই কিলোমিটার দূরে। নানা সমস্যা বিরাজমান থাকলেও একটি পরিবারের সদস্যরাই টিকিয়ে রেখেছে গ্রামটিকে। শুনতে অবাক হলেও ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নে রয়েছে এ গ্রামটি। ছোট্ট এ গ্রামটির নাম বিষ্ণুপুর, যা দেশের ‘দ্বিতীয়’ ছোট গ্রাম হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। অনেকেই কেষ্টপুর নামেও ডেকে থাকেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০০ বছর আগে এ গ্রামটিতে ৭-৮টি হিন্দু পরিবারের বসতি ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নানা সমস্যার কারণে এ গ্রাম থেকে বসতিরা চলে যায়। ফলে প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে গ্রামের বসতি। তবে একটি মাত্র পরিবার আগলে রেখেছে দীর্ঘদিন ধরে এ গ্রামটিকে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বোয়ালমারী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দুরে গ্রামটির অবস্থান। যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই নেই। জমির আইল দিয়ে চলতে হয় এখানকার মানুষদের।
নেই বাজার-দোকান, স্কুল এমনকি মসজিদও। ঈদ ও জুম্মার নামাজ পড়তে হয় দুই কিলোমিটার দূরের গ্রামে গিয়ে। শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল না থাকায় ছেলে-মেয়েরা দূর গ্রামের স্কুলে পড়তে যায়। চিকিৎসা কেন্দ্র না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন এখানকার মানুষজন। কোনো সুযোগ সুবিধা না পেলেও এ গ্রামে একটি পরিবার কোনো রকমে টিকে আছেন। ভোট ছাড়া কোন জনপ্রতিনিধি এ গ্রামে এসেছেন এমন নজির নেই। গ্রামের চারিদিকে ফসলি জমি আর খাল-নালা বেষ্টিত।
বছরের বেশীর ভাগ সময়ই থাকে পানিতে তলিয়ে। সেই সময় নৌকা করেই চলাচল করতে হয় বসতিদের। গ্রামের বয়স্করা কৃষি কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। গ্রামের বাসিন্দা সত্তুর বছর বয়সী সলেমান মোল্লা বলেন, নানা বঞ্চনা, দুর্ভোগ-দূগতি এবং রাস্তা-ঘাট না থাকায় অনেকেই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। আমরা একটা পরিবার গ্রামটিকে টিকিয়ে রেখেছি। এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বাররা আসেন শুধু ভোটের সময়। ভোট চলে গেলে তাদের আর দেখা যায় না। কোনো এমপিও কখনো আসেনি এ গ্রামে।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা হেমায়েত মোল্যা জানান, তাদের মূল সমস্যা যাতায়াতের। দেড় কিলোমিটর দূরে স্কুল, দুই কিলোমিটার দুরে হাইস্কুল। ফলে ছেলে-মেয়েদের কষ্ট করে পড়ালেখা করতে হয়। মসজিদ, হাট-বাজার অনেক দূরে হওয়ায় কষ্ট হয় তাদের। গ্রামে একটি মাত্র পরিবার বসবাস করার কারণে কোনো সুযোগ-সুবিধাই তারা পান না। গ্রামের প্রবীন নারী আনোয়ারা বেগম জানান, ছোট্ট গ্রামটিতে মুক্তিযুদ্ধকালে আশ্রয় নিয়েছিলেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা। বিভিন্ন স্থান থেকে তারা এ গ্রামে এসে রাতে আশ্রয় নিতেন। দিনে আবার চলে যেতেন।
আরেক বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মোল্লা বলেন, কিছু বছর আগেও গ্রামটিতে পাঁচটি পরিবারের বসবাস ছিল। নানা বঞ্চনা আর দুর্ভোগের কারণে তারা গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। এখন শুধু একটি পরিবারই রয়েছে গ্রামে।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভির হাসান চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গ্রামটির নাম শুনেছি। গ্রামটিতে উন্নয়নের বিষয়ে সকলের সাথে আলোচনা করে যা করা দরকার তা চেষ্টা করবো।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ‘শ্রীমুখ’ গ্রামটি এশিয়ার সবচেয়ে ছোট গ্রাম। সরকারি তালিকাভুক্ত ফরিদপুরের বিষ্ণুপুর গ্রামটিতে বসবাস করে আসছে মাত্র একটি পরিবার। সেই হিসেবে দ্বিতীয় ছোট গ্রাম হচ্ছে ফরিদপুরের বিষ্ণুপুর।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল