দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। পদ্মা সেতু চালুর পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কমেছে। তবে ঈদে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পায় স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক গুণ। এ সময় ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রী ও চালকদের। সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, আসন্ন ঈদুল ফিতরেও যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। কয়েক মাস ধরে নৌরুটে নাব্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি দৌলতদিয়া প্রান্তে বন্ধ রয়েছে ৪টি ফেরিঘাট। ঘাট ও নাব্য সংকটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ঘরে ফেরা যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়ায় ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে। যদিও নৌপথে ফেরি সার্ভিস ও লঞ্চসহ অন্যান্য জলযানের চলাচল নিশ্চিতে ঘাটের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে সোমবার সমন্বয় সভা করা হয়েছে। ওই সভা সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদযাত্রায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৭টি ফেরি ও ২০টি লঞ্চ চলাচল করবে। ফেরিগুলোর মধ্যে ৯টি রো রো (বড় ফেরি), ৩টি কে টাইপ ও ৫টি ছোট ফেরি।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, দৌলতদিয়া প্রান্তে ৭টি ঘাটের ৪টি বন্ধ রয়েছে। ৩টি ঘাট দিয়ে ফেরি লোড-আনলোড করা হচ্ছে। দৌলতদিয়া প্রান্তের লঞ্চঘাট থেকে প্রায় ১ কিলেমিটার পর্যন্ত এলাকায় ১টি চ্যানেল দিয়ে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল করছে। সেখানে দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। একাধিক লঞ্চচালক দুর্ঘটনার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ফেরিঘাটে ধুলাবালু রয়েছে। কোনো কারণে দৌলতদিয়া প্রান্তে ১টি ফেরিঘাট বন্ধ হলে ২টি ঘাট দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করতে হবে।
বাস টার্মিনাল এলাকায় বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ সামনে রেখে ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া থেকে মৌসুমি কাউন্টার বসানো হয়। অনেকেই কাউন্টার বসানোর পরিকল্পনায় দেনদরবার শুরু করেছেন। মৌসুমি কাউন্টারে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয় বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছর প্রশাসন সভা করে। কিন্তু সেই সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় না। দৌলতদিয়া টার্মিনাল থেকে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়। তিন চাকার যানবাহনগুলোও অতিরিক্ত ভাড়া নেয়। প্রশাসন এসব দেখেও কোনো বছরই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রোধ করতে পারেনি। তা ছাড়া ফেরিঘাট এলাকায় ঈদ সামনে রেখে ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে এবারের ঈদযাত্রায় ১৭টি ফেরি চলাচল করবে। ৩টি ঘাট হলেও ফেরি লোড-আনলোডে কোনো সমস্যা হবে না। গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ফেরিঘাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ। চুরি, ডাকাতি ছিনতাইয়ের মূল হোতা আজগর শেখ ও রাজুসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা জেলে রয়েছে। ঈদযাত্রা স্বস্তি করতে পুলিশ ঘাট এলাকায় কাজ করছে।
জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে। সেখানে মোবাইল কোর্ট, পুলিশ, আনসার সদস্যসহ ফায়ার সার্ভিস কাজ করবে। এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে আশা এই কর্মকর্তার।