শিশুদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় খেলনার নাম টমটম গাড়ি। সাধারণত গ্রামগঞ্জের বৈশাখী মেলায় এ খেলনার দেখা মেলে। দেশের অনেক স্থানে তৈরি হলেও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার খোলাশ গ্রামে ব্যাপকভাবে তৈরি হয় এ টমটম গাড়ি। এমনকি এ খেলনা তৈরি কেন্দ্র করে গ্রামের প্রতিটি পরিবারে গড়ে উঠেছে কুটিরশিল্প।
বর্তমানে বগুড়া শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের খোলাশ গ্রাম পরিচিত হয়ে উঠেছে টমটম গ্রাম নামে। চট্টগ্রামের লালদীঘি জব্বারের মেলা ও সান্যাল ফকিরের মেলা, ঢাকার দোহারের নুরুল্যাপুর মেলা, কুষ্টিয়ার লালনের মেলা, ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া মেলা, দিনাজপুরের চরকাই, বগুড়ার পোড়াদহ মেলাসহ দেশের অধিকাংশ স্থানের মেলায় এখানকার খেলনার চাহিদা রয়েছে। রাজধানীর রমনা বটমূলের মেলায়ও কদর বেড়েছে টমটমের। সরেজমিনে খোলাশ গ্রামে ঢুকতেই খেলনা তৈরির খটখট শব্দ কানে বেজে ওঠে। গ্রামের প্রতিটি উঠানে দেখা যায় কাঠ, বাঁশ আর কাগজ দিয়ে রংবেরঙের টমটম গাড়ি, কাঠের গাড়ি, কাঠের চরকা, কাঠের পাখি, বেহালা, সারিন্দা, ঘিন্নিসহ হরেক খেলনা তৈরির উৎসব। কাঠ ও বাঁশের কাঠিতে রং লাগানো, রঙিন কাঠি রোদে শুকানো, বাঁশ দিয়ে টমটম গাড়ির চাতকী বানোনো, চাতকীতে রং লাগানো, কাগজে আলপনা আঁকাসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় শিশু-নারী ও কারিগরদের। ধাপেরহাটের খেলনা তৈরির কারিগর ফেরদৌস প্রামাণিক জানান, দেশের বিভিন্ন মেলা ও উৎসবে পাইকারি খেলনা বিক্রি করেন তিনি। বছরে গড়ে ১ লাখ খেলনা তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি টমটম তৈরিতে খরচ পড়ে ৭-৮ টাকা। পাইকারি হিসেবে ১০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে টমটম ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। টমটম গাড়ির নামকরণের ব্যাখ্যা হিসেবে এক কারিগর বলেন, ঠেলাগাড়ির আদলে তৈরি টমটম। ওপরে মাটির একটি বাটি শক্ত কাগজে মোড়ানো। এতে দুটি কাঠি বসানো থাকে। গাড়িটি টেনে নেওয়ার সময় কাঠি দুটি মাটির বাটিতে পড়লেই টংটং আওয়াজ হয়। তাই এর নাম টমটম। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের মধ্যে শুধু বগুড়াতেই টমটম খেলনা তৈরি হয়। বৈশাখে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় এ খেলনা। একজন কারিগর সপ্তাহে ৪০০ টমটম বানাতে পারেন। খোলাশ গ্রামে প্রায় ১০ হাজার মানুষ এ পেশায় জড়িত। বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকার বিভিন্ন খেলা বিক্রি হয় এ গ্রামে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) বগুড়ার উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাহফুজুর রহমান জানান, এ হস্তশিল্পে আগ্রহীদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ বিসিকের সুবিধা নিতে চাইলে তা দেওয়া হবে।