কক্সবাজারের মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নতুন কয়লা সরবরাহকারী নিতে নতুন করে দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে চলতি বছরের ১৭ মার্চ মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সরবরাহকারীর আমদানি করা কয়লার ১১তম চালানে বিপুল পরিমাণ মাটি পাওয়ার পর চালানটি ফিরিয়ে দেয় কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (সিপিজিসিবিএল)। এ ঘটনার পরই সরবরাহকারী বদলাতে নতুন করে দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশের মেঘনা গ্রুপের ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ভারতের আদিত্য বিড়লা গ্লোবাল ট্রেডিং (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেডের কনসোর্টিয়াম সরবরাহ করা নিম্নমানের কয়লার চালানের পর এ সিদ্ধান্ত নেয় বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এরই মধ্যে নিম্নমানের কয়লা সরবরাহকারীদের বক্তব্য শোনা হয়েছে। ২১ এপ্রিল মেঘনা গ্রুপের ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও আদিত্য বিড়লা গ্লোবাল ট্রেডিং (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ (পিডিবি) বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। নিম্নমানের কয়লা সরবরাহের কারণে এ কনসোর্টিয়ামকে সম্ভবত পেনাল্টি দিতে হতে পারে। জানা যায়, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহের জন্য খুব শিগগিরই নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। এজন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। এরপর যারা দরপত্রে অংশ নেবে তাদের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতাকেই কয়লা সরবরাহের কাজ দেওয়া হবে। তবে নিম্নমানের কয়লা সরবরাহের জন্য আগের সরবরাহকারীদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে দেওয়া হবে। এর মধ্যে সংগ্রহে থাকা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালানো হবে। এ সময়ের মধ্যে নতুন দরপত্র আহ্বান করা হবে। তবে আগের সরবরাহকারীদের কয়লাবাহী যে জাহাজগুলো এরই মধ্যে পাইপলাইনে চলে এসেছে অর্থাৎ সমুদ্রপথে আছে তাদের কয়লা নেওয়া হতে পারে। কারণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এ সময় বসিয়ে রাখা যাবে না। তাহলে লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা থাকবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহে নতুন সরবরাহকারীর জন্য নতুন করে টেন্ডারের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগের সরবরাহকারীর সঙ্গে এক বছরের চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়েছে। নিম্নমানের কয়লা সরবরাহের বিষয়টি আলাদাভাবে দেখা হচ্ছে। সেই কয়লা আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি। এরই মধ্যে সিপিজিসিবিএল, পিডিবি ও বিদ্যুৎ বিভাগের সদস্যদের নিয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে নিম্নমানের কয়লা সরবরাহের অভিযোগ ওঠা সরবরাহকারীর বক্তব্য শোনার পাশাপাশি নতুন সরবরাহকারীর জন্য দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে সরবরাহের পাশাপাশি বর্তমান সরবরাহকারীর সরবরাহ করা কয়লার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’ মেঘনা গ্রুপের ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও আদিত্য বিড়লা গ্লোবাল ট্রেডিং (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেডের কনসোর্টিয়ামটি ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে আদিত্য বিড়লার মালিকানাধীন ইন্দোনেশিয়ার একটি খনি থেকে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করে আসছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে পরের ১২ মাসে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ৩৫ লাখ টন কয়লা আমদানি করতে গত বছর কনসোর্টিয়ামটির সঙ্গে চুক্তি করে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। কনসোর্টিয়ামটি এখন পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫০ লাখ টন কয়লা সরবরাহ করেছে। মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক মো. নাজমুল হক এর আগে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা মান অনুযায়ী ১১তম চালানে কয়লা পাইনি। আমদানিকৃত এ কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব না। এ কয়লা ব্যবহার করলে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাবে।’
মাতারবাড়ী সাইট অফিসের প্রধান প্রকৌশলী (পরিচালন ও সংরক্ষণ) মুহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ‘১১তম চালানে আমদানিকৃত এ কয়লায় দৃশ্যত কিছু ফরেন পার্টিকেল ছিল। এটি মানসম্পন্ন কয়লা ছিল না। এ কারণে আমরা এ কয়লার চালান বাতিল করে দিয়েছি।’