উজানের ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও তিস্তা ব্যারেজ খুলে দেওয়ায় চলনবিলের আট উপজেলার নিম্নাঞ্চল আকস্মিক বন্যার কবলে। ফলে হাজারো বিঘা জমির পাকা ধান তলিয়ে যাচ্ছে।
চলনবিলের অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চলে অবস্থিত তাড়াশ উপজেলার হামকুড়িয়া, শ্যামপুর, মাগুড়া, কুশাবাড়ি, মাকড়শোন, কুন্দইল, ভেটুয়া ও কাটাবাড়ী, গুরুদাসপুরের রুহাই, বিলসা, পিপলা, হরদমা, চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের মির্জাপুর, বহরমপুর, ছাইকোলা ইউনিয়নের লাঙ্গলমোড়া, খলিশা গাড়ি, হান্ডিয়াল ইউনিয়নের নবীন, চর নবীন, বিলচলন ইউনিয়নের দোদারিয়া, উত্তর সেনগ্রাম, ভাঙ্গুরা উপজেলার রূপসি, পাটুল, চৌবাড়িয়া, অষ্টমণিষা, দিলপাশার ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকা। সিংড়া উপজেলার বেড়া বাড়ি, কাউয়াটিকড়ি, পানলি, তিশিখালী, ডাহিয়া অঞ্চলেরও বহু পাকা ধানের জমি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
গত বুধবার থেকে হঠাৎ করে অকাল বন্যা দেখা দেয়। এরপর থেকে চলনবিলে প্রতিদিন পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে ভরা মৌসুমে কৃষক ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। সৈয়দপুর, টাঙ্গাইল, বগুড়া, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান হতে শত শত হার্ভেস্টর (ধান কাটা মেশিন) ভাড়া করে এনেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। দ্রুত গতিতে বন্যার পানি প্রবেশ করার কারণে অনেক জমিতে হার্ভেস্টর নামানোই সম্ভব হচ্ছে না।
কৃষকরা জানিয়েছেন, ঈদ কেন্দ্র করে মৌসুমি শ্রমিকেরা বাড়ি চলে যাওয়ার পরপরই আকস্মিক বন্যায় চলনবিলের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে যায়।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ অঞ্চলে প্রায় ৯০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। সরিষার জমিতে নাবিজাতের ব্রিধান-২৯ থাকায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, উজানে ঢলগড়া পানি ও স্থানীয়ভাবে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে চলনবিল অঞ্চলে এ বন্যা দেখা দিয়েছে।
চলনবিলে মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ১৬ টি নদ-নদীর মধ্যে আত্রাই ও ভদ্রাবতী নদী দিয়ে উজানের ঢলের পানি নিম্নধারা যমুনায় গিয়ে মেশে। কিন্তু বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ৫ দিন যমুনার পানি বিপৎসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হবে।
সরেজমিনে নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিয়াস, গুরুদাসপুর উপজেলার রুহাই, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাগুড়াবিনোদ, উল্লাপাড়া উপজেলার রহিমপর ও শাহজাদপুর এলাকার পোতাজিয়া পয়েন্টে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটতে নেয়া হচ্ছে বিঘা প্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। কিন্তু পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মেশিন ডুবে যাওয়ায় তা দিয়েও আর ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না।
সিংড়ার বিয়াস গ্রামের বাসিন্দা রোজিনা আক্তার মিতু বলেন, অনেক কৃষক শ্রমিক না পেয়ে ধানের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ অর্ধেক ভাগ দিয়ে ধান ঘরে তুলছেন।
রাউতারা বাঁধের কারণে কিছু ধান রক্ষা হলেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। তাড়াশ উপজেলার মাগুড়া মুকন্দ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গলা পানিতে নেমে কৃষক ধান কাটার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেই সঙ্গে বৃষ্টির পানি তাদের দুর্ভোগ আরো বৃদ্ধি করেছে।
সিংড়া-তাড়াশ সংযোগস্থলের রানী ভবানী ব্রিজের উজানে গিয়ে দেখা যায়, ভদ্রাবতী নদীর উপর নির্মিত জলকপাট উপচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এমরান হোসেন বলেন, ঈদের আগে ২৪ ঘণ্টায় আত্রাইয়ে ৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেলেও ঈদ পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৩ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। তবে স্থানীয় ভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় চলনবিলের নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সূত্র বলছে, আগামী ৫ দিন এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
ছাইকোলার কৃষক আব্দুল কাদের জানান, কয়েক দিনের ঝড় ও ভারি বর্ষণের ফলে ধান গাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। এরপর আবার প্রতিদিন পানি বাড়ছে ৬ ইঞ্চি থেকে ১ ফুট করে। ফলে দ্রুত তলিয়ে যাচ্ছে মাঠের ধান।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল