বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার ১১ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। অথচ দীর্ঘ সময়েও মামলাটির বিচারকাজ সম্পন্ন হয়নি। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির জন্য দীর্ঘ আট বছর ধরে ঝুলে আছে। উচ্চ আদালত ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ১১ জনকে যাবজ্জীবন ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের অভিযোগ, অদৃশ্যশক্তির প্রভাবে মামলাটির শুনানি হচ্ছে না। ভিকটিম পরিবারের লোকজন জীবদ্দশায় সাত খুনের আসামিদের বিচার শেষে রায় কার্যকর দেখে যেতে চান। মামলার রায় কার্যকর করার দাবিতে নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী শুক্রবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের লামাপাড়ায় র্যাব ১১-এর তৎকালীন সিও লে. কর্নেল তারেক সাঈদের নির্দেশে চেকপোস্ট বসিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ পাঁচজনকে এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালকসহ মোট সাতজনকে অপহরণ করে। পরে ওই দিনই তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনায় ফেলে দেয়। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে নজরুল ইসলামসহ ৬ জন ও পরদিন ১ জনের লাশ ভেসে ওঠে। এ ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশ। পরবর্তী সময়ে র্যাব কর্মকর্তা কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় মামলার প্রধান মাস্টারমাইন্ড নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিল নুর হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট আসামিদের। নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘অদৃশ্যশক্তির ইশারায় দীর্ঘ আট বছর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলাটি শুনানির জন্য ঝুলে আছে। কেন এই বিচার ঝুলে আছে আমরা তা রাষ্ট্রের কাছে জানতে চাই। আমাদের দাবি, সাতটি পরিবারের দিকে তাকিয়ে এই রায় দ্রুত কার্যকর করুন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাত খুনের রায় কার্যকর না হওয়ায় আমরা অনিশ্চয়তায় ভূগছি। ১১ বছর অনেক মামলার রায় কার্যকর হয়েছে। সাত খুন মামলাটি এখনো কেন ঝুলে থাকবে? তাহলে আইনের প্রতি কীভাবে আমাদের শ্রদ্ধা থাকবে। আমরা তো আইনের প্রতি আস্থাশীল। এ মামলাটির রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক। এই সাতটি পরিবার এ হত্যাকাণ্ডে ধ্বংস হয়ে গেছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবার অন্তত এটুকু নিয়ে স্বস্তিতে থাকুক হত্যাকাণ্ডটির বিচার হয়েছে।’ মামলার নিম্ন আদালতের বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘শুরু থেকেই বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মামলাটি নিয়ে নানান টালবাহানা করতে থাকে। কিন্তু জনগণের চাপের কারণে নিম্ন ও উচ্চ আদালতে সাত খুনের মামলাটি দ্রুত বিচার সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু আসামি পক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার পর সরকারের প্রচ্ছন্ন প্রভাবের কারণে শুনানি হয়নি। যাতে আসামি পক্ষ সুবিধা পায়।’