আজ পয়লা বৈশাখ। হৃদয় এখন তার গ্রামের বাড়িতে। বাবা-মায়ের সঙ্গে এসেছে। হৃদয়ের দাদিমা অসুস্থ। ডাক্তার দেখানো হয়েছে। দাদিমা এখন ভালো আছেন। দাদিমার অসুখটা আসলে মনের। তাঁর দুই ছেলে। আমিনুল ইসলাম ও আতিকুল ইসলাম। আমিনুল ইসলাম হৃদয়ের বাবা। দাদিমার বড় ছেলে। বড় আদরের। চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকা। মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকেন ছেলে। চাইলেই দেখা সম্ভব না। মায়েরা বুঝি এমনই হন। সন্তানকে আগলে রাখতে চান মায়ার বাঁধনে। হৃদয়ের বাবা-মা, দাদু-দাদিকে নিয়ে যেতে চান ঢাকায়। কিন্তু তিনি রাজি নন। ঢাকা তাঁর ভালো লাগে না। তাই গ্রামে হৃদয়ের চাচার সঙ্গেই থাকেন। দাদিমা হৃদয়কে অনেক স্নেহ করেন। অনেক!
দাদিমা ছোট চাচাকে ডেকে বললেন, আজ পয়লা বৈশাখ। স্কুল মাঠে তো বৈশাখী মেলা। হৃদয়কে মেলায় নিয়ে যাবি না? চাচা বললেন, তুমি কোনো চিন্তা কর না মা, আমি ওকে নিয়ে যাব। চাচা, চাচাতো ভাই আশিক সবাই মিলে বিকালে মেলায় যায় ওরা। মেলায় গিয়ে হৃদয় রীতিমতো অবাক! স্কুল মাঠে লোকারণ্য। মাঠের একপাশে হাঁড়িভাঙা খেলা শুরু হয়েছে। ভারি মজার খেলা। কিছুক্ষণ পর শুরু হলো লাঠি খেলা। একি! হৃদয় মুগ্ধ হয়ে দেখল, হৃদয়ের দাদু, বাবা, চাচা লাঠি খেলায় অংশগ্রহণ করছেন। লাঠি খেলার মাঝে যে, এতো আনন্দ আছে, হৃদয়ের আগে তা জানা ছিল না। হৃদয়ের দাদু, বাবা, চাচা সবাই এসব খেলা জানেন। অথচ হৃদয় সেই খেলাগুলো কেমন করে খেলতে হয় সেটাই জানে না। মাঠের পুবদিকে শিশু-কিশোরের দল নাগরদোলায় উঠে আনন্দ করছে। কেউ নাটাই ঘুড়ি কিনছে, কেউবা লাটিম কিনছে। হৃদয় রঙিন ঘুড়ি, সুতো ও নাটাই কিনল।
সবশেষে ছোট্ট হৃদয় অনেকদিন পরে গ্রামে শেকড়ের কাছে ফিরে এসে, নিজেকে যেন নতুনভাবে আবিষ্কার করল।