গত ১২ জুন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টায় বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা সময় শেষ হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা সময়ে দুই ধাপে ৮৬ কেজি চাল নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে বিতরণ করার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এ নির্দেশনার প্রেক্ষিতে প্রথম কিস্তির চাল কুতুবদিয়ার জেলেরা পেলেও দ্বিতীয় কিস্তির চাল এখনও পাননি। যদিও ওই নিষেধাজ্ঞার সময়ে সাগরে মাছ ধরা নিয়ে কঠোর অবস্থানে ছিল সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ফলে, অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে জেলেদের পরিবার। যা নিয়ে জেলেদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মৎস্য বিভাগ বলছে, দ্বিতীয় কিস্তির চাল কবে পাবে, তার নির্দেশনা এখনও তাদের কাছে আসেনি।
কুতুবদিয়ার মৎস্য দপ্তরের তথ্যমতে, জেলেদের জন্য ভিজিএফের মাধ্যমে ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ করে সরকার। প্রথম কিস্তিতে ৫৬ কেজি চাল পেলেও বাকি ৩০ কেজি চাল এখনো দেওয়া হয়নি। এ উপজেলায় সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ১০ হাজার ৯শ ৫৯ জন। তবে, অনিবন্ধিত জেলের সংখ্যা তার দ্বিগুণ রয়েছে। এবারের নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে ৫৬টি অভিযানে বেহুন্দি জাল ৪০২টি ও অন্যান্য জাল ৩ হাজার ২৪০ লক্ষ মিটার ও মাছ ১ দশমিক ৬২ মেট্রিক টনসহ ২৪টি মাছ ধরার নৌকা জব্দ করে। এরমধ্যে ৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে এক জেলেকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। এসময় জরিমানা ৯৭ হাজার ২০০ টাকা ও নিলাম ২৮ হাজার ৩০০ টাকা আদায় করেন ওই আদালত। এদিকে, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) তথ্যমতে, সাগরে মাছ ধরার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা সময়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ২৭৫টি অভিযান পরিচালনা করে। এতে অবৈধ কারেন্ট জাল ৩৬ লাখ ২৮ হাজার ১১০ মিটার, বিভিন্ন ধরনের অবৈধ জাল ২ হাজার ৭৪৪টি, ৫০৫ জন জেলেসহ ৫৭টি নৌকা এবং ১৬ হাজার ৩২৮ কেজি মাছ জব্দ করা হয়। জব্দকৃত সরঞ্জামাদি ও মাছের আনুমানিক বাজার মূল্য ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। আটককৃত এসব অবৈধ জালসমূহ স্থানীয় প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ধ্বংস এবং জব্দকৃত মাছ স্থানীয় এতিম খানায় বিতরণ করা হয়। এছাড়াও মাছ ধরার নৌকা ও জেলেদের স্থানীয় প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
উত্তর ধূরুং ও আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের নিবন্ধিত জেলে গোলাম রহমান, আব্দুল রহমান, লিয়াকত আলী, শফিউল আহমেদ, সরওয়ার আলমসহ অনেকেই জানান, ইতোমধ্যে বেশির ভাগ জেলে মাছ ধরতে সাগরে চলে গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ছোট পরিবার। নেই কোন বড় সন্তান। ফলে, স্বামী সাগরে যাওয়ায় তাদের পক্ষে চালগুলো স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংগ্রহ করতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। আবার অনেকেই এগুলো সংগ্রহও করে না। কারণ, সাগরে মাছ ধরলে তাদের আয় শুরু হয়। এরা আক্ষেপ করে জানান, অসময়ে সরকারের সহয়তার চাল না পাওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুনজরের দাবি করেছেন তারা।
কুতুবদিয়া উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব জানান, সাগরে মাছ ধরা ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের দ্বিতীয় কিস্তির চাল বিতরণের নির্দেশনা এখনও আসেনি। নির্দেশনা পেলে দ্রুত সময়ে জেলেদের দ্বিতীয় কিস্তির চাল বিতরণ করা হবে।