দ্রুত কমে যাচ্ছে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের পানি। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে নৌপথে লঞ্চ চলাচল। ইতোমধ্যে জেলার ৬টি উপজেলা কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এসব উপজেলায় নৌপথ ছাড়া বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর, লংগদু ও বরকল—এই ছয়টি উপজেলা সরাসরি হ্রদের উপর নির্ভরশীল। বরকল ও লংগদুতে কিছু ছোট নৌযান চলাচল করলেও বাকি চার উপজেলায় পুরোপুরি বন্ধ লঞ্চ চলাচল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হ্রদে ড্রেজিং না হওয়ায় প্রতি বছরই এমন সমস্যায় পড়েন স্থানীয়রা।
রাঙামাটির ১০টি উপজেলার মধ্যে মাত্র চারটি সড়ক যোগাযোগে যুক্ত। বাকি ছয়টি উপজেলার জন্য শহরের সঙ্গে একমাত্র ভরসা নৌযান। বর্ষায় যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকলেও, খরায় কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এসব নৌপথ।
বর্তমানে হ্রদের পানি এতটাই নিচে নেমে গেছে যে, ডুবোচর জেগে উঠেছে। ফলে, অনেক স্থানেই লঞ্চের তলা আটকে যাচ্ছে। লঞ্চ বন্ধ থাকায় বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে ছোট নৌযানে যাতায়াতকারী যাত্রীদের।
রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, “গ্রীষ্মের শুরু থেকেই হ্রদের পানি দ্রুত কমছে। এখন হ্রদের বিভিন্ন অংশে শত শত ডুবোচর জেগে উঠেছে। ইতোমধ্যে রাঙামাটির সাতটি পয়েন্টে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি পথগুলোও ঝুঁকিতে রয়েছে।”
তিনি জানান, শুধু যাত্রী পরিবহন নয়, পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও দেখা দিয়েছে সমস্যা। ফলে উপজেলা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
অন্যদিকে, পানির সংকটে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্প কাপ্তাই কর্ণফুলী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে ২৩২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে চারটি বন্ধ, চালু আছে মাত্র একটি ইউনিট, যার উৎপাদন মাত্র ৪ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুল রহমান বলেন, “বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা ৮০ এমএসএল (মিন সি লেভেল)। অথচ রুলকার্ভ অনুযায়ী এই সময়টায় থাকা উচিত ছিল ৮২ ফুট। পানি না বাড়লে উৎপাদন সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “পাহাড়ি ছড়া ও ঝরনা শুকিয়ে যাওয়ায় কৃত্রিম হ্রদে পানির উৎস অনেকটাই কমে গেছে। ১৯৭০ সালে জাইকার এক জরিপে হ্রদের সর্বোচ্চ পানির স্তর ছিল ১১৮ ফুট এমএসএল। কিন্তু ড্রেজিং না থাকায় পানি ধারণক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে।”
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত ড্রেজিং শুরু করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
বিডি প্রতিদিন/আশিক