রাজশাহীর শলুয়া উপজেলার আবাসন প্রকল্প-১ এ বসবাস করেন মারজিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘ঘর পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু সংস্কার না হওয়ায় এ ঘরে থাকা সম্ভব নয়। চালের টিন নষ্ট, বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে, কাপড়সহ সব কিছু ভিজে যায়।’ শুধু মারজিনা নন, অধিকাংশ ঘরের টিনে মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে। দেয়ালে ফাটল ধরেছে। অনেকে আবাসন এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। যারা আছেন, তারা দিন পার করছেন কষ্টে। নির্মাণের মাত্র তিন বছরের মধ্যে টিন শেড ঘরগুলোর দেয়াল ও টিনের ছাদ, দরজা-জানালা ভেঙে গেছে বা মরিচা ধরেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ফুটো চাল দিয়ে পানি পড়ে। চারঘাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরহাদ লতিফ জানান, চারঘাট উপজেলার একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাঁচাপাকা মিলে প্রায় ৮৫০টি ঘর আছে। পুরাতন টিন শেড ঘরগুলো বেড়া ও ছাউনি টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে কিছু কিছু ঘরের টিন নষ্ট হতে পারে। সেগুলো নিজ দায়িত্বে ঘর মালিককে সংস্কার করতে হবে বলে জানান তিনি। শলুয়া ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্প আবাসন-১, আবাসন-২ ও হলিদাগাছি প্রকল্পে ৫০৪টি ঘর আছে। এর মধ্যে আবাসন-১ ও ২ এর প্রায় ১৪০টি ঘর বসবাসের অনুপযোগী। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে আগুনে পুড়ে ৪৫টি ঘর একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ ঘরে বৃষ্টির সময় তাদের নিত্য ব্যবহারযোগ্য আসবাবপত্রগুলো ভিজে যায়। কেউ কেউ উপায় না পেয়ে ইট আর কাগজ দিয়ে বৃষ্টি আটকানোর চেষ্টা করে। অনেকে বর্ষার সময় প্রতিবেশী অন্যদের ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
আবাসন-২ এর সাধারণ সম্পাদক স্বপন জানান, পুড়ে যাওয়া ঘরগুলো মেরামত করার জন্য বেশ কয়েক বার উপজেলা থেকে পরিদর্শন করে গেলেও আজ পর্যন্ত মেরামত হয়নি। পাশাপাশি জরাজীর্ণ ঘরগুলো মেরামত করার জন্য ইউএনওকে বলা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। উপকারভোগীদের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে হলিদাগাছি আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি জলি বলেন, আশ্রয়ণে ৪৫টি ঘর আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া ১১০টি ঘর ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। সরকারি বরাদ্দ না থাকায় সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই আশ্রয়ণের উপকারভোগীরা। কাজ না থাকায় ১০০টি পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। এ ছাড়াও উপকারভোগীদের নিরাপদ পানি, পানি নিষ্কাশন, ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা ও কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসক সংকট প্রকট। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের তৈরি ঘরগুলোর সমস্যা সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করা হবে।