ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ-আইপিএলের পর্দা উঠে গেছে। শুরু হয়েছে মাঠের উত্তাপ। এবারের আসরের সূচনা হয়েছে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে। রীতি অনুযায়ী প্রথম ম্যাচেই মাঠে নেমেছে আইপিএলের গতবারের চ্যাম্পিয়ন দল কলকাতা নাইট রাইডার্স। তাদের সামনে এবার ট্রফি ধরে রাখার লড়াই। তবে দলটিকে এবার দিতে হতে পারে অগ্নিপরীক্ষা।
বলিউড তারকা শাহরুখ খানের দল গত বছর শ্রেয়াস আইয়ারের নেতৃত্বে তৃতীয় বারের মতো আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছিলো। সেবার চেন্নাইয়ের একপেশে ফাইনালে হায়দ্রাবাদকে ৮ উইকেটে হারিয়ে কাপ জেতে রাইডার্সরা।
তবে চলতি আসরে দলে অনেক পরিবর্তন এনেছে কলকাতা। দলে নেই গত বারের ফাইনালের সেরা মিশেল স্টার্ক। নেই কাপজয়ী অধিনায়কও। বদল এসেছে কোচিং প্যানেলেও। তাই সম্ভাবনার সাথে চ্যালেঞ্জও থাকছে। কারা রয়েছেন এ বারের কলকাতা দলে? কতোটুকু শক্তি আছে তাদের ব্যাটে বলে; দেখে নেওয়া যাক বিশদ পরিসরে।
আজিঙ্কা রাহানে (ব্যাটার/অধিনায়ক)
সবাইকে চমকে দিয়ে মুম্বাইয়ের সাবেক এই ব্যাটারকে অধিনায়ক করেছে নাইট রাইডার্স। আইপিএল ক্যারিয়ারে এখনও পর্যন্ত ১৮৫টি ম্যাচে ৪৬৪২ রান করেছেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ১২৩। দু’টি শতরানও করেছেন ডানহাতি ব্যাটার।
রিঙ্কু সিং (ব্যাটার)
কলকাতা তো বটেই, বর্তমানে ভারতের টি২০-এর জাতীয় দলেরও অন্যতম ভরসার নাম রিঙ্কু সিং। ছয় বছরের ক্যারিয়ারে কলকাতার বাইরে যাননি বাঁহাতি এ ব্যাটার। ৪৬ ম্যাচে ১৪৩ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৮৯৩ রান।
মণীষ পাণ্ডে (ব্যাটার)
নাইট রাইডার্সের পুরনো সদস্য মণীষ দিল্লি, লখনউ, মুম্বাই, পুণে, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ ঘুরে আবার ফিরেছেন কলকাতায়। ৩৬ বছরের ডানহাতি ব্যাটার ১৭১ ম্যাচে ১২১ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩৮৫১ রান। একটি শতরানও রয়েছে তাঁর।
রভমান পাওয়েল (ব্যাটার)
দিল্লির হয়ে দুই বছর এবং রাজস্থানের হয়ে এক বছর খেলে ক্যারিবীয় তারকা এবার কলকাতায়। ক্যারিয়ারে ২৭টি ম্যাচ খেলেছেন পাওয়েল। ১৪৭.৫৪ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩৬০ রান।
অঙ্গকৃষ রঘুবংশী (ব্যাটার)
২০ বছরের তরুণ ব্যাটারের আইপিএল অভিষেক কলকাতার হাত ধরেই। ২০২৪ সালে আইপিএল জয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৫৫-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে গত বার ১৬৩ রান করেছিলেন অঙ্গকৃষ।
কুইন্টন ডি কক (উইকেটরক্ষক)
১২ বছরের আইপিএল ক্যারিয়ারে বার বার দল পাল্টেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ১০৭ ম্যাচ খেলা মারকুটে বাঁহাতি ব্যাটার ১৩৪-এর উপর স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩১৫৭ রান। আইপিএল কেরিয়ারে রয়েছে দু’টি শতরানও।
রহমতুল্লা গুরবাজ (উইকেটরক্ষক)
আফগানিস্তানের তরুণ উইকেটরক্ষক ব্যাটার দুই বছর খেলছেন আইপিএলে। ১৪ ম্যাচে ১৩৪ স্ট্রাইক রেটে ২৮৯ রান। যে কোনও বোলিংকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
লভনিথ সিসৌদিয়া (উইকেটরক্ষক)
বেঙ্গালুরুতে দুই বছর থাকলেও এখনও কোনও ম্যাচ খেললেনি কর্নাটকের উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
আন্দ্রে রাসেল (অলরাউন্ডার)
কলকাতার ঘরের ছেলে আন্দ্রে রাসেল। ৩৭ বছরের ডানহাতি অলরাউন্ডার কখনও ব্যাট, কখনও বল হাতে নাইটদের অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন। ১২৭ ম্যাচ খেলা রাসেলের স্ট্রাইক রেট ১৭৫। ক্যারিয়ারে ১১৫ উইকেটও নিয়েছেন তিনি।
বেঙ্কটেশ আয়ার (অলরাউন্ডার)
এবারের আইপিএলের অন্যতম দামি ক্রিকেটার। দলের সহ-অধিনায়কও তিনিই। চার বছরের আইপিএল কেরিয়ারে ৫১ ম্যাচ খেলেছেন আয়ার। ১৩৭ স্ট্রাইক রেটে ১৩২৬ রান করার পাশাপাশি নিয়েছেন তিনটি উইকেটও।
মইন আলি (অলরাউন্ডার)
২০১৮ সাল থেকে আইপিএল খেলছেন ইংল্যান্ডের এই স্পিন অলরাউন্ডার। ক্যারিয়ারে এখনও পর্যন্ত ৬৭ ম্যাচে ১১৬২ রান করেছেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ১৪১.৫৩। বল হাতে ওভারপিছু মাত্র সাত রান দিয়ে নিয়েছেন ৩৫টি উইকেট।
রমনদীপ সিংহ (অলরাউন্ডার)
বিধ্বংসী এই মিডল অর্ডার ব্যাটার অসাধারণ ফিল্ডারও। আইপিএল কেরিয়ারে ২০ ম্যাচ খেলা রমনদীপের স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৬৭।
অনুকূল রায় (অলরাউন্ডার)
গত তিন বছর ধরে আইপিএল খেললেও তেমন ভাবে সুযোগ পাননি এই ভারতীয় অলরাউন্ডার। মুম্বাই ছেড়ে এবারে কলকাতা আসা অনুকূল ১১ ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন।
স্পেন্সার জনসন (বোলার)
মিচেল স্টার্কের জায়গায় আর এক অসিকে দলে নিয়েছে নাইট রাইডার্স। গত বারই আইপিএলে অভিষেক হয় জনসনের। ২.৮ কোটি রুপির অসি পেসার নাইটদের পেস ব্যাটারির প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠতে পারেন।
এনরিখ নরকিয়া (বোলার)
কলকাতার পেস ব্যাটারির নবতম সংযোজন ৩২ বছরের প্রোটিয়া। ৪৬ ম্যাচে ৬০ উইকেট নেওয়া নরকিয়া গতি যে কোনও ব্যাটারকেই চাপে ফেলতে পারে।
হর্ষিত রানা (বোলার)
নাইটদের পেস ব্যাটারির অন্যতম ভরসা। ডানহাতি পেসার ইতোমধ্যে জাতীয় দলের ভরসাও হয়ে উঠছেন। আইপিএল কেরিয়ারে ২১ ম্যাচে ২৫ উইকেট নিয়েছেন রানা।
চেতন সাকারিয়া (বোলার)
তিন বছর আইপিএল খেললেও প্রথম বছরের পর সেভাবে সুযোগ পাননি। কেরিয়ারে ১৯টি ম্যাচ খেলেছেন এই পেসার। নিয়েছেন ২০ উইকেট।
বৈভব অরোরা (বোলার)
মাত্র তিন বছরের আইপিএল ক্যারিয়ার এই তরুণ পেসারের। এখনও পর্যন্ত ২০ ম্যাচে ১৯ উইকেট নেওয়া বৈভব ওভারপিছু দিয়েছেন নয় রানেরও বেশি।
সুনীল নারিন (বোলার)
কলকাতা নাইট রাইডার্সের আরেক ঘরের ছেলে নারিন। বল হাতে তো বটেই, ব্যাট হাতেও বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন সুনীল। ১৩ বছর আইপিএলে ১৭৭ ম্যাচ খেলেও ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৬.৭৫। ১৮০ উইকেট নেওয়া সুনীল ব্যাট হাতেও ধ্বংসাত্মক। প্রায় ১৬৬ স্ট্রাইক রেটে ১৫৩৪ রান করেছেন বাঁহাতি ব্যাটার।
বরুণ চক্রবর্তী (বোলার)
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভারতকে জেতানোর অন্যতম কারিগর। আইপিএলে নাইট বাহিনীর বোলিং বিভাগের অন্যতম অস্ত্র হয়ে উঠেছেন বরুণ। ক্যারিয়ারে ৭১টি ম্যাচে ৮৩ উইকেট নেওয়া বরুণের স্পিন বোঝা যেকোনও ব্যাটারের পক্ষেই কঠিন।
ময়াঙ্ক মার্কান্ডে (বোলার)
ছয় বছরের আইপিএল ক্যারিয়ারে পাঁচ বার দল পাল্টেছেন এই স্পিনার। এ বারে তিনি কলকাতায় এসেছেন। ৩৭ ম্যাচে ৩৭ উইকেট নেওয়া স্পিনার কেরিয়ারে দু’বার চার উইকেট নিয়েছেন।
তবে এবার শুধু অধিনায়ক বদল নয় কেকেআর তাদের মেন্টরও বদল করতে বাধ্য হয়েছে। গত আসরের দলটিকে চ্যাম্পিয়ন করার অন্যতম কারিগর গৌতম গাম্ভীরও এবার নেই। তিনি এখন ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ। তার সঙ্গে সহকারী কোচ অভিষেক নায়ার এবং রায়ান টেন রায়ান টেন ডেসকাটও চলে গেছেন।
তবে এই পরিবর্তনের ফলে নতুন মুখ যুক্ত হয়েছে কেকেআরের কোচিং স্টাফে। সহকারী কোচ হিসেবে যোগ দিয়েছেন ওটিস গিবসন এবং মেন্টর হিসেবে এসেছেন আইপিএল কিংবদন্তি ডোয়েন ব্র্যাভো। যদিও ব্র্যাভো কেকেআরের জন্য বহিরাগত কিন্তু তার অভিজ্ঞতা দলকে সহায়তা করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তারপরও কলকাতার সামনে চ্যালেঞ্জ থাকছেই বলে মনে করছেন ক্রিকেট বোদ্ধারা।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল