থাইল্যান্ড একেবারে অপরিচিত দল নয় নিগারদের কাছে। দুই দল নিয়মিত টি-২০ ক্রিকেটে মুখোমুখি হচ্ছে। ২০ ওভারের ম্যাচে পরিচিত মুখ থাইল্যান্ডের বিপক্ষে এই প্রথম ওয়ানডে খেললেন নিগার সুলতানা, শারমিন সুলতানা, ফারজানা হক পিংকি, ফাহিমা খাতুন, জান্নাতুল ফেরদৌসরা। নারী বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার খেলতে নেমে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েছে নিগার বাহিনী। থাইল্যান্ডকে ১৭৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। নারী বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এটা। আগের বড় জয় ছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫৪ রানে। সেঞ্চুরি করেছেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। নারী বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে এটা বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের প্রথম সেঞ্চুরি। শুধু তাই নয়, এক ম্যাচে বাংলাদেশের দুই বোলারের পাঁচটি করে উইকেট নেওয়াও রেকর্ডস। এ ছাড়া এই প্রথম কোনো ওয়ানডেতে দুই দুটি সেঞ্চুরির জুটি গড়েছে বাংলাদেশ। লাহোর সিটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন মাঠে রেকর্ডময় ম্যাচ জিতে নিগার বাহিনী আগামী ১৩ এপ্রিল মুখোমুখি হবে আয়ারল্যান্ডের। আইরিশ নারী দল নিজেদের প্রথম ম্যাচে হেরেছে পাকিস্তানের কাছে।
ছয় দলের নারী বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেলছে অন্যতম ফেবারিট হয়ে। গতকাল ছিল বাছাইপর্বের দ্বিতীয় দিন। প্রথম দিন অন্যতম ফেবারিট ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে চমকে দেয় স্কটল্যান্ড। বাংলাদেশ গতকাল টস হেরে ব্যাটিং করে। ম্যাচে অভিষেক হয় ইশমা তানজিমের। কিন্তু অভিষেকটা রঙিন হয়নি ইশমার। ১৩ বলে ৮ রান করেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ফারজানা ও শারমিন ১০৪ রান যোগ করেন ২৩.৩ ওভারে। বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে দুটি সেঞ্চুরি হাঁকানো ফারজানা সাজঘরে ফেরেন ৫৩ রানে। ফারজানা ফেরার পর ক্রিকেটে আসেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। তখন ৫১ রানে ব্যাট করছিলেন শারমিন। এরপর দুজনে মিলে পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করেন। নিগার আউট হন ইনিংসের ওভারের শেষ বলে। তার আগে ৫৪ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন। নারী বিশ্বকাপে এটা আবার বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরি। নিগার ৮০ বলে ১০১ রানের ইনিংস খেলেন ১৫ চার ও ১ ছক্কায়। সেঞ্চুরি করেন ৭৮ বলে। যা দেশের দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। অবশ্য নিগারের সেঞ্চুরির বাইরে আরও দুটি সেঞ্চুরি রয়েছে। দুটিই করেছেন ওপেনার ফারজানা। ভারতের বিপক্ষে মিরপুরে ১০৭ এবং পচেফস্ট্রোমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০২ রান করেন ফারজানা। নিগার ৭৮ বলে সেঞ্চুরি করেন। হাফসেঞ্চুরি করেন ৪৫ বলে ৮ চারে। শেষ ৫০ রান করেন ৩৩ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায়। নিগার সেঞ্চুরি করলেও শারমিন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৯৪ রানে। ১২৬ বলের ইনিংসটি খেলেন ১১ চারে। হাফসেঞ্চুরি করেন ৭৫ বলে। দুজনে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৫২ রান যোগ করেন। ওয়ানডেতে যে কোনো আসরে এ রান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। আগে সর্বোচ্চ ছিল ১৪৩ রান। যা গত ডিসেম্বরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ফারজানা ও শারমিন জুটি ১৪৩ রানের জুটি গড়েছিলেন।
টার্গেট ২৭২ রান। আকাশসমান। থাই দুই ওপেনার নাতায়া বুচাতাম ও চানিদা সুত্তারুয়াং ৮.১ ওভারে ৩৮ রান যোগ করেন। তখন মনে হচ্ছিল, থাইল্যান্ড ভালোই খেলবে। কিন্তু দুই স্পিনার ফাহিমা খাতুন ও জান্নাতুল ফেরদৌস বল হাতে তুলে নেওয়ার পরই ভোজবাজির মতো পাল্টে যায় সবকিছু। দুজনের সাঁড়াশি স্পিনে ২৮.৫ ওভারে ৯৩ রানে গুটিয়ে যায় থাইল্যান্ড। লেগ স্পিনার ফাহিমা ও অফ স্পিনার জান্নাতুল পাঁচটি করে উইকেট নেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম জোড়া ফাইভার। এর আগে খাদিজাতুল কুবরা ও বাঁহাতি স্পিনার একবার পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। ফাহিমা ও জান্নাতুল দুজনে দুর্দান্ত বোলিং করেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে এক ইনিংসে জোড়া পাঁচ উইকেটের ইতিহাস এই প্রথম। ফাহিমার স্পেল ৮.৫-১-২১-৫। জান্নাতুলের স্পেল ৫-৩-৭-৫। জান্নাতুল এতটাই দুর্দান্ত ছিলেন বল হাতে যে, একসময় ১ রানের খরচে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। পরবর্তীতে আরও ৬ রান দেন।
আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ভারতের মাটিতে বসবে আট জাতির নারী বিশ্বকাপ। পাকিস্তানের মাটিতে ছয় জাতির বাছাইপর্ব থেকে দুটি দল খেলবে চূড়ান্ত পর্বে। ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডে সর্বশেষ নারী বিশ্বকাপ খেলেছিল বাংলাদেশ এবং বাছাইপর্ব টপকেই খেলেছিল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ২৭১/৩, ৫০ ওভার (ইশমা তানজিম ৮, ফারজানা হক পিংকি ৫৩, শারমিন সুলতানা ৯৪*, নিগার সুলতানা ১০১। সুথিরুয়াং ৬-০-৪০-০, মায়া ৬-০-২৮-১, পুথাওয়াং ১০-০-৪১-১, বুচাথাম ১০-০-৪৬-০, কামচম্ফু ৯-০-৫৮-১, চাতুরংগ্রাত্তানা ৬-০-৩৬-০, লাওমি ৩-০-১৮-০)
থাইল্যান্ড : ৯৩/১০, ২৮.৫ ওভার (বুচাথাম ১৭, সুথিরুয়াং ২২, কঞ্চারায়েঙ্কাই ৫, চান্থাম ৭, চাইওয়াই ১৫, মায়া ০, পুথাওয়াং ৬*, সুয়াঞ্চনরাথি ৩, লাওমি ৪, চাতুরংগ্রাত্তানা ১, কামচম্ফু ৬*। মারুফা আক্তার ৫-১-১৬-০, নাহিদা ৫-০-৩০-০, ফাহিমা খাতুন ৮.৫-১-২১-৫, রাবেয়া খান ৫-১-১৮-০, জান্নাতুল ফেরদৌস ৫-৩-৭-৫)
ফল : বাংলাদেশ ১৭৮ রানে জয়ী, ম্যাচসেরা : নিগার সুলতানা