রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, নাশকতাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটছে। পারিবারিক কলহ, আধিপত্য বিস্তার, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ ও পূর্বশত্রুতার জেরে খুন বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোর, ছিনতাইকারী ও ডাকাত চক্র। শুধু সন্ধ্যা বা রাত নয়, দিনদুপুরেও এসব ঘটনা ঘটছে। যেসব এলাকায় নিম্ন আয় ও ভাসমান মানুষের বসবাস বেশি, সেখানে অপরাধের ঘটনাও বেশি। কিশোর গ্যাংও পিছিয়ে নেই। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ যে কোনো ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীর মিরপুরে পল্লবী এলাকায় সেলিম (৩৫) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরিবারের দাবি, স্থানীয় মাদক কারবারিরা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেলিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সেলিম এক সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুর ১১ পল্লবীর বিহারি ক্যাম্প ওয়াপদা কলোনি বিল্ডিংয়ে থাকতেন। গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনে গত বৃহস্পতিবার রাতে ইন্টারনেট ও ডিশ ব্যবসায়ী সুমন মিয়াকে (৩৫) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত সুমন রংপুরের মিঠাপুকুর এলাকার মাহফুজুর রহমানের ছেলে। তিনি মিরপুর ভাসানটেক এলাকায় দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। নিহতের স্বজনরা বলেন, সুমন আগে মহাখালী টিবি গেট এলাকায় থাকতেন। বনানী এলাকায় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেখানেই তিনি ইন্টারনেট ও ডিশ ব্যবসার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। সেই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সেভেন স্টার গ্রুপের সন্ত্রাসী রুবেলের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। বেশ কিছুদিন ধরে সুমনকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল তারা। এ ব্যবসা থেকে তাকে হটিয়ে দিতে হত্যা করা হয়েছে। গুলশান থানার (এসআই) মারুফ আহমেদ বলেন, ঘটনার বিস্তারিত জানতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
ঢাকার চকবাজারের চম্পাতলী সোয়ারীঘাট এলাকায় গতকাল ভোরে ছিনতাইকারী সন্দেহে স্থানীয়দের গণপিটুনিতে তিনজন আহত হওয়ার পর একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম মো. আসিফ মুন্সী (১৮)। তিনি ইসলামপুর কাপড়ের দোকানের সেলসম্যান ছিলেন। মানিকগঞ্জ হরিরামপুর উপজেলার আন্দারমানিক গ্রামের ভ্যানচালক মো. জহির মুন্সির ছেলে আসিফ। বর্তমানে কামরাঙ্গীরচর মুসলিমবাগ ঠোটা এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি বড়। চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পূর্ব গুজরার হোয়ারাপাড়া এলাকায় গরচোর সন্দেহে রবিউল হোসেন রুবেল নামে একজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাহরির সময় এ ঘটনা ঘটে। নিহত রবিউল হোসেন রুবেল চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানার নুরুল আলমের ছেলে। গতকাল দুপুরে পুলিশ স্থানীয় মোবারক খালের পূর্ব পাশে খোলা জমি থেকে ওই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে। নরসিংদীর রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিতে একজনসহ দুজন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। গতকাল ভোরে চাঁনপুর ইউনিয়নে মোহিনীপুর গ্রামে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- রায়পুরা উপজেলা চাঁনপুর ইউনিয়নে মোহিনীপুর গ্রামের খোরশেদ মিয়ার ছেলে আমিন (২৩) ও একই গ্রামের বারেক হাজীর ছেলে বাশার (৩৫)। তারা দুজনই আওয়ামী লীগ সভাপতি সালাম মিয়ার সমর্থক। এদিকে দুজন নিহতের ঘটনায় পুরো গ্রামে আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। রায়পুরা থানার ওসি আদিল মাহমুদ জানিয়েছেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সামসু মেম্বার ও আবদুস সালাম মিয়া এবং তাদের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়ায়। এতে দুজন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কুপিয়ে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করেছে ছিনতাইকারীরা। আহত হয়েছেন নিহতের বন্ধু অপর এক ব্যবসায়ী। এ সময় এলাকাবাসী ধাওয়া করে দুই ছিনতাইকারীকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার বড়ইবাড়ী-জামালপুর সড়কের জামালপুর ইউনিয়নের হাটুরিয়া চালা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম সজীব হোসেন (৩৮)। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের গাবচালা এলাকার মুক্তার আলীর ছেলে। আহত ব্যবসায়ীর নাম রয়েল মিয়া। কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ জানান, এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়েছে। পিরোজপুর সদর উপজেলার টোনা ইউনিয়নের ওদনকাঠি গ্রামে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে এক রিকশাচালকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে পিরোজপুর সদর থানা পুলিশ। নিহত সাব্বির সিকদার (২৫) পিরোজপুর পৌরসভার রায়েরকাঠি এলাকার হারুন সিকদারের ছেলে। সাব্বিরের পাঁচ বছর বয়সি একটি সন্তান রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ পেশাদারির সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। কারও কাছে কোনো অপরাধ ও অপরাধী সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে তা পুলিশকে দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ রইল। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, অপরাধ কমাতে হলে সামাজিক নজরদারি বাড়ানোসহ একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসার প্রবণতা বাড়াতে হবে।