গত বছরের আগস্টে দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তার প্রায় ৯৮ শতাংশের পেছনে ছিল রাজনৈতিক কারণ; ১ শতাংশের কিছু বেশি আক্রমণের ঘটনা ছিল সাম্প্রদায়িক। পুলিশের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত বছরের ৪ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনা অনুসন্ধান করে পুলিশ এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের যে কোনো সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রেস উইং আরও জানায়, হামলার ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দাবি করেছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মোট ১ হাজার ৭৬৯টি সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাটের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবন, সম্পদ ও উপাসনালয়ের ওপর ২ হাজার ১০টি ঘটনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ১ হাজার ৭৬৯টি অভিযোগের মধ্যে ১ হাজার ৪১৫টি অভিযোগের অনুসন্ধান করেছে তারা। বাকি ৩৫৪টির অনুসন্ধানকাজ চলছে। অনুসন্ধান করা অভিযোগগুলোর মধ্যে ১ হাজার ২৫৪টির সত্যতা পাওয়া গেছে। বাকি ১৬১টির সত্যতা পাওয়া যায়নি। যে অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ১ হাজার ২৩৪টি অর্থাৎ ৯৮ দশমিক ৪ শতাংশ ঘটনাই ঘটেছে রাজনৈতিক কারণে। বাকি ২০টি অর্থাৎ ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রদায়িক কারণে। অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ৬২টি মামলা এবং ৯৫১টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তৈরি করা অভিযোগের তালিকা তারা সংগ্রহ করেছে। পুলিশ ওই তালিকা ধরে প্রত্যেকটি স্থান, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছে গিয়ে তদন্ত করেছে। ভুক্তভোগীদের পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে সাধারণ ডায়েরি, নিয়মিত মামলা এবং অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ৭৬৯টি অভিযোগের মধ্যে পুলিশ এখন পর্যন্ত ৬২টি মামলার প্রাথমিক তথ্য নির্ধারণ করে মামলা দায়ের করেছে। তদন্তের ভিত্তিতে অন্তত ৩৫ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঐক্য পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, মোট অভিযোগের ৮২ দশমিক ৮ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৫২টি ঘটনা ঘটেছে শেখ হাসিনার পতনের দিন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। এ ছাড়া ৪ আগস্ট ৬৫টি এবং ৬ আগস্ট ৭০টি ঘটনা ঘটেছে।
ঐক্য পরিষদের হিসাবের বাইরে পুলিশ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আরও ১৩৪টি অভিযোগ পেয়েছে। পুলিশ এসব অভিযোগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে। এই অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে অন্তত ৫৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ৬৫ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে মোট ১১৫টি মামলা দায়ের হয়েছে এবং অন্তত ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার পদক্ষেপের বিষয়ে পুলিশ জানায়, সরকার সব ধর্ম, জাতিগত ও সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সংবিধান ও আইন সংখ্যালঘুদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষাব্যবস্থা দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ-নির্বিশেষে দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। প্রেস উইং জানায়, পুলিশ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগ গ্রহণের জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু করেছে। তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগ এলে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি ফোকাল পয়েন্ট সেই অভিযোগ পর্যালোচনা করছে। প্রতিটি অভিযোগ নিরসনে পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
