টিউলিপকে নিয়ে ব্রিটেনে অস্বস্তি

শেখ রেহানাকন্যা ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে লাগাতার সংবাদে ব্রিটিশ জনগণ কিছুটা অবাক, তার চেয়ে বেশি বিরক্ত! ফ্ল্যাট উপহার গ্রহণ কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে বাংলাদেশে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছে তার নাম। এখন বিষয়টি আর টিউলিপে সীমিত নেই! টিউলিপকে রক্ষা করতে তার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন যিনি, খোদ  ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারকে ধরে টান দিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম। সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে, ‘ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের সখ্যতা’। সেই রিপোর্টে আকারে-ইঙ্গিতে বুঝানো হয়েছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে টিউলিপের পারিবারিক সখ্যতার কারণে পার্টির ফান্ডে আওয়ামী লীগ নেতাদের টাকা ঢুকেছে। কিয়ার স্টারমারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিকার বিষয়েও সংবাদে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। সেই ২০১৬ সাল থেকেই কমবেশি বিতর্ক চলছে। বাংলাদেশে একটি আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে তিনি সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর। তাই এবারই প্রথম নয়, বর্তমান সরকারের মন্ত্রী টিউলিপকে নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ ব্রিটিশ গণমাধ্যমে এর আগে আরও বেশ কয়েকবার হয়েছে। তিনি প্রথমবার নেতিবাচকভাবে সংবাদ শিরোনাম হয়েছিলেন চ্যানেল ফোরের একজন প্রযোজককে তার প্রেগন্যান্সি নিয়ে মন্তব্য করে। ২০১৭ সালে যখন ইরানে আটক ব্রিটিশ নাগরিক নাজানিন জাঘারি-রাটক্লিফের মুক্তির জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছিল, তখন চ্যানেল ফোর নিউজের একটি সাক্ষাৎকারে টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কেন তার খালা শেখ হাসিনাকে গুম, হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করেননি। ওই প্রশ্নের উত্তরে টিউলিপ বলেছিলেন, তিনি বাংলাদেশি নন। এরপরই তিনি সেই প্রশ্নকর্তা নারী প্রযোজক যিনি তখন গর্ভবতী ছিলেন তার প্রতি ‘হুমকিমূলক’ আচরণ করেছিলেন। পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে টিউলিপ এ বিষয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন। টিউলিপ ফের বিতর্কিত শিরোনাম হয়েছিলেন ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ওঠা গুমের অভিযোগ নিয়ে তার নীরবতার কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছিল ব্রিটিশ গণমাধ্যম। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে গিয়ে নিখোঁজ ব্রিটিশ বাংলাদেশি শিক্ষানবিশ আইনজীবী মীর আহমেদ বিন কাসেমের খোঁজ নিয়ে টিউলিপ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না কেন এ প্রশ্ন তুলেছিল ব্রিটিশ গণমাধ্যম। এ সংবাদের ফলোআপ আরেকটি সংবাদ গত সপ্তাহে ডেইলি মেইল প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, মীর আহমেদ বিন কাসেমের স্ত্রীকে বাংলাদেশে হুমকি দেওয়া হয় চ্যানেল ফোরের প্রশ্নের পরপরই। পরিবারটির অভিযোগ, এটি টিউলিপ করিয়েছেন। এদিকে গত বছর ব্রিটেনে জাতীয় নির্বাচনের পর দেশটির আর্থিক খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধবিষয়ক মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই তার বিরুদ্ধে আয় গোপন রাখার অভিযোগ ওঠে। টিউলিপের বিরুদ্ধে আয়ের বিষয়ে তদন্ত শুরুর বিষয়টি ব্রিটিশ গণমাধ্যমে সংবাদ শিরোনাম হয়। পার্লামেন্টের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা লন্ডনে তার একটি একটি ফ্ল্যাট থেকে ভাড়ার আয় পার্লামেন্টে সময়মতো জানাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে এ তদন্ত করে। তবে টিউলিপ তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করেন ও পরে তাকে এ অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত ১৭ আগস্ট ডেইলি মেইল তাদের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে টিউলিপ সিদ্দিকের নর্থ লন্ডনের বর্তমান আবাসস্থল নিয়ে প্রশ্ন তোলে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, টিউলিপ বর্তমানে ২ মিলিয়ন মূল্যের একটি বাড়িতে বসবাস করছেন, যা প্রভাবশালী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাজিম করিমের মালিকানাধীন। ওই ব্যবসায়ী বাংলাদেশের তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক মহলে ভিআইপি মর্যাদাপ্রাপ্ত এবং টিউলিপের খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মানুষ বলে পরিচিত ছিলেন। এর মধ্যে সর্বশেষ ১০ জানুয়ারি ডেইলি টাইমস টিউলিপ-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী নাজিম করিমের সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের ছবি ছাপিয়েছে। এতে বিপদে পড়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার! এ অবস্থায় শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, ব্রিটিশ গণমাধ্যমে টিউলিপকে নিয়ে নানান অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে অস্বস্তিতে আছেন ব্রিটিশরা।