ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশের নাগরিক হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বিএসএফ কর্তৃক সংঘটিত সব হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আন্তর্জাতিক আদালতে দোষীদের বিচার দাবি করে। এ সময় ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ঢাকায় এবার উঠল ডাক, বিএসএফ নিপাত যাক’, ‘ফেলানী স্বর্ণা জয়ন্ত, হত্যা চলছে অনন্ত’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে তারা প্রতিবাদ জানান। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় আগ্রাসনের বহিঃপ্রকাশ হলো সীমান্ত হত্যা। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে ২ হাজারের অধিক সীমান্ত হত্যা সংঘটিত হয়েছে। বাংলাদেশ ভারত নতজানু পররাষ্ট্রনীতির জন্য আমরা এসব হত্যাকান্ডের বিচার সুষ্ঠু পাইনি। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী (বিজিবি) শুধু পতাকা বৈঠক করে নিহত বাংলাদেশিদের লাশ নিয়ে আসার কাজেই নিয়োজিত। বিজিবিকে আগের সেই শক্তি ফিরিয়ে দিতে হবে যাতে তারা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রক্তচক্ষু দেখিয়ে সীমান্তে অবস্থান করতে পারে নতুবা বিজিবিকে পুনরায় বাংলাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর) জাগ্রত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও তাহমিদ আল মুদ্দাস্সির বলেন, আমরা বাংলাদেশ সীমান্তে হওয়া প্রতিটি হত্যার বিচারের দাবি নিয়ে এসেছি। বিগত সময়ে বর্ডার গার্ডকে বস্তুত সীমান্তের দারোয়ান হিসেবে রাখা হয়েছে যে দারোয়ানের কোনো কর্তৃত্ব নেই। আমরা সীমান্তরক্ষীদের ক্ষমতায়নের জন্য এসেছি আমাদের সীমান্তরক্ষীদের হারানো ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন এই জুলাইয়ে আমরা আবার স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই শহীদ ফেলানী ও শহীদ আবরার ছিল আমাদের জুলাই গণ অভ্যুত্থানের দুর্বার প্রেরণা। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফেলানী ও আবরাররা বারবার ফিরে আসবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা বলতে চাই মেরুদন্ড নিয়ে চলুন। আমরা একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি চাই আপনাদের থেকে। পিলখানা হত্যাকান্ডে ভারত সরাসরি যুক্ত ছিল। দেশপ্রেমিক সেনাদের হত্যার পর বাংলাদেশে তারা পুতুল সরকার হাসিনার মাধ্যমে তাদের আগ্রাসনের শিকার বানিয়েছিল। তারা আমাদের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশিদের লাশ আর মাদক ছাড়া কিছু দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি ভারতীয় মিডিয়া কীভাবে সন্ত্রাস ছড়িয়েছে। তারা মুহূর্তে চট্টগ্রাম, রংপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা চেয়ে উসকানিমূলক সংবাদ প্রচার করে। তাদের নেতারাও উসকানিমূলক কথা বলার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রপাগান্ডা চালায়। তাদের এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। ভারতীয় আধিপত্যবাদের কবর রচনা করতে হবে। সীমান্তে ২ সহস্রাধিক বাংলাদেশিকে হত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। প্রতিটি হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে হবে।
