ব্যবসাবাণিজ্য মানবজীবনে অপরিহার্য একটি অনুষঙ্গ। গুরুত্বপূর্ণ এই অনুষঙ্গটির বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে চমৎকার সব নির্দেশনা। যে নির্দেশনাগুলো মেনে চললে যাপিত জীবনের অনেক সংকটই কেটে যাবে অনায়াসে। সমাজ রাষ্ট্র সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়বে প্রশান্তি ও নিরাপত্তার সুবাতাস। সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে ব্যবসাবাণিজ্য পরিচালনা করলে একজন ব্যবসায়ী শুধু দুনিয়াতেই নয়, পরকালেও লাভবান হবে নিঃসন্দেহে। যারা সততা ও আমানতদারিতার সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্যে আত্মনিয়োগ করে নবীজি (সা.) তাদের জন্য সুবিশাল পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-
আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত-
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীরা (আখিরাতে) নবী, সিদ্দিক (সত্যবাদীগণ) ও শহীদগণের সঙ্গে থাকবে (জামে তিরমিজি ১২০৯)।
ইসলাম প্রদত্ত ব্যবসাবাণিজ্য সম্পর্কে মৌলিক কয়েকটি নির্দেশনা।
এক. ব্যবসায় কারও ক্ষতি করা যাবে না। মানুষের ক্ষতি হয় এমন সব পন্থাকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। সুতরাং ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। মানুষের উপকার করার মানসিকতা থাকতে হবে। কারও ক্ষতি যেন না হয়, সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।
ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত-
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহাও যাবে না (সুনানে ইবনে মাজাহ- ২৩৪১)।’
দুই. ধোঁকা, প্রতারণা ও ফাঁকিবাজি করা যাবে না।
এ ধরনের অপকর্ম ইসলামে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত। মন্দ জিনিস ভালো বলে চালিয়ে দেওয়া, ভালোর সঙ্গে মন্দের মিশ্রণ ঘটিয়ে ধোঁকা দেওয়া ইত্যাদি সম্পূর্ণ হারাম। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রসুল (সা.) বাজারে গিয়ে একজন খাদ্য বিক্রেতার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তিনি খাদ্যের ভিতরে হাত প্রবেশ করে দেখলেন ভিতরের খাদ্যগুলো ভিজা বা নিম্নমান। এ অবস্থা দেখে রসুল (সা.) বললেন, হে খাবারের পণ্যের মালিক এটা কী? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রসুল! এতে বৃষ্টি পড়েছিল। রসুল (সা.) বললেন, তুমি সেটাকে খাবারের ওপরে রাখলে না কেন; যাতে লোকেরা দেখতে পেত? যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত নয় (মুসলিম : ১০২)।
তিন. ওজনে নিজ স্বার্থরক্ষায় কমবেশি করা যাবে না।
অন্যকে দেওয়ার সময় ওজনে কম দেওয়া আর নেওয়ার সময় বেশি করে নেওয়া জঘন্য অপরাধ। মহান আল্লাহ বলেন, ধ্বংস যারা পরিমাপে কম দেয় তাদের জন্য। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে। আর যখন তাদের মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয় (সুরা মুতাফফিফিন : ১-৩)।
♦ লেখক : খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর