ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল, ডিগ্রিরচর ও চরভদ্রাসন উপজেলার হরিরামপুর, চরঝাউকান্দা ইউনিয়নে গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে বিভিন্ন ফসল। তবে চরাঞ্চলের এসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাদাম খেত। পানিতে খেত তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকেরা। ফলে এ বছর বাদাম আবাদ করে কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ও ডিক্রিরচর ইউনিয়নের পদ্মার তীরবর্তী চরাঞ্চলে ব্যাপক হারে বাদাম আবাদ করা হয়ে থাকে। গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে নিচু জমিতে আবাদ করা বাদাম খেত তলিয়ে যায়। বাদাম পরিপক্ক না হলেও কৃষকেরা বাদাম গাছ তুলে ফেলছেন। অনেকে আবার খেত তলিয়ে গেলেও তারা বাদাম গাছ তুলেনি। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, হঠাৎ করে পানি ঢুকে পড়ায় খেত থেকে তারা বাদাম তুলতে পারেননি। তাছাড়া বাদাম পরিপক্ক না হওয়ায় অনেকেই গরু ছাগলের খাদ্য হিসাবে বাদাম গাছ তুলে ফেলছেন। নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ৩৮ দাগ এলাকার কৃষক আইয়ুব শেখ জানান, গত শুক্রবার হঠাৎ করেই পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে নিচু স্থানের বাদাম, তিল ও সবজির খেত তলিয়ে গেছে। এতে করে তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
এদিকে, পদ্মা নদী তীরবর্তী চরঝাউকান্দা ও হরিরামপুর ইউনিয়নের চর কল্যানপুর, দিয়ারা গোপালপুর, আরজখার ডাঙ্গী ও চর শালেপুর, গাজীরটেক ইউনিয়নের মাঝি ডাঙ্গী, বঙ্গেশ্বর ডাঙ্গী, জয়দেব সরকার ডাঙ্গী গ্রামের প্রায় শতাধিক একর জমির বাদাম ও তীল খেত ডুবে গেছে। পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের আঃ গফুর মৃধা ডাঙ্গী গ্রাম, কামার ডাঙ্গী ও মাথাভাঙ্গা গ্রামের প্রায় একশ একর জমির বাদাম খেত ডুবু ডুবু অবস্থায় রয়েছে বলে জানা যায়। এসব পদ্মার চরে ডুবে যাওয়া ফসলী মাঠে নারী পুরুষ মিলে পানির নিচ থেকে বাদাম তুলতে দেখা গেছে। চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের দিয়ারা গোপালপুর এলাকার কৃষক আবেদ আলী বলেন, শুস্ক মৌসুমে নিজেদের সমস্ত পুঁজি খাটিয়ে প্রায় ১৮ বিঘা জমিতে বাদামের আবাদ করেছিলাম। মাঠের বাদাম ফসলগুলো প্রায় পরিপক্ক অবস্থায় চলে আসছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় অকাল বন্যা দেখা দেওয়ায় সমস্ত বাদাম ফসলী খেত ডুবে গেছে। এখন হাঁটু পানির নিচ থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে কিছু বিনষ্ট বাদাম ফসল উঠাচ্ছি, কিন্তু এসব বাদামের তেমন কোনো বাজার মূল্য পাওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে বাদামের ব্যাপক আবাদ হয়। এ বছর ৬শ ৩০ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ক্ষতির তথ্য আমাদের কাছে আসেনি।
চরভদ্রাসন উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মামুনুর রহমান বলেন, হঠাৎ করে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলী মাঠের জরিপ ও পরিদর্শন কাজ চলমান রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এনে তাদের পুনর্বাসনের জন্য সব ব্যবস্থা করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ