বৈসাবি উৎসবের রঙ লেগেছে পাহাড়ে। বর্ণীল সাজে সেজেছে পাহাড়। বসেছে আনন্দ উল্লাস আর নাচ-গানের আসর। বাড়তি আনন্দ দিতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সংষ্কৃতিক ইনস্টিটিউটের চত্বরে বসানো হয়েছে বৈসাবি মেলা। সপ্তাহব্যাপী এ মেলার আয়োজন থাকলেও উৎসব চলবে প্রায় অর্ধমাস ব্যাপী।
সোমবার ছিল বৈসাবি মেলার চতুর্থ দ্বিতীয় দিন। বিকাল ৪টা থেকে শুরু হয় মেলার আনুষ্ঠানিকতা। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নানা রঙে ঢংয়ে সেজে মেলায় দলে দলে যোগ দিতে আসে ১০ ভাষাভাষির ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীরা। এ মেলায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যা তরুণ-তরুণীদের রঙ বে-রঙের সাজ আনন্দ বাড়িয়েছে কয়েকগুন।
বৈসাবি মেলা ঘুরে দেখা যায়, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যা তরুণ-তরুণীরা মেতে উঠেছে তাদের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলায়। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের গড়াই নৃত্য, তঞ্চঙ্গ্যা ঘিলা খেলা ও চাকমাদের ছিল বেম্বু খেলা। খেলা দেখতে মেলাস্থলে ভিড় জমে পাহাড়ি ও বাঙালিদের। সকল সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির মেলবন্ধনে এক আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি হয় রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিটিউট চত্বরে।
অন্যদিকে বেচা-বিক্রি বেড়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ১৪৫টি স্টলে। দূর-দুরান্ত থেকে আসছে হাজারো দেশি-বিদেশি পর্যটক। সন্ধ্যা নামলে স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালিদেরও উপস্থিতিও থাকে চোখে পড়ার মতো। পুরো মেলা জুড়ে আছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ইতিহাস ঐতিহ্যের চিত্র। তাদের পোশাক, বস্ত্র, অলংকার, বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্য আর জীবন-জীবীকার সব সরঞ্জাম। যা বর্তমানে কালের পরির্বতনে প্রায় বিলুপ্ত বললেই চলে।
মেলায় কথা হয় নয়ন তারা চাকমার সাথে। তিনি বলেন, বৈসাবি আসলে আমাদের উৎসব। নানা নামে, নানা আয়োজনে পালন করা হয় এ বৈসাবি উৎসব। উৎসবে যোগ দিতে আমাদেরও ভালো লাগে। বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী ধর্ম, বর্ণের নারী পুরুষের সাথে দেখা হয়। একটা মিলন মেলার পরিণত হয়।
অন্যদিকে সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নৃত্য-সঙ্গীত, চাকমা, বম, চাক, ত্রিপুরা ও মারমা সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে শুরু হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক উৎসব বৈসাবি মেলা। দীর্ঘ বছর ধরে এ প্রথা চালু রয়েছে। তাছাড়া বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণ উপলক্ষে চৈত্র সংক্রান্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঘরে ঘরে পালন করা হয় বৈসাবি। এ উৎসবকে চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাইং, ত্রিপুরারা বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু এবং অহমিকারা বিহু বলে আখ্যায়িত করে। চাকমা ভাষা ও রীতি অনুযায়ী ২৯ চৈত্র ফুল বিজু, ৩০ চৈত্র মূল বিজু ও ১লা বৈশাখ গোজ্যাপোজ্যা ও সাংগ্রাই পালন করে থাকে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল