ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭৩ কিলোমিটার রেলপথে লেভেল ক্রসিং আছে ৭৯টি। এর মধ্যে ৫৭টিই পড়ে আছে অরক্ষিত অবস্থায়। এগুলোতে নেই কোনো গেটম্যান। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তালিকার বাইরে জেলায় রয়েছে আরও ২০টি লেভেল ক্রসিং। এগুলোর তথ্যসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছেও নেই।
অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের উভয়দিকে নোটিস টানিয়েই যেন দায় সেরেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। নোটিসে লেখা, যে কোনো দুর্ঘটনার দায় শুধু পথচারী ও যানবাহন চালকদের। লেভেল ক্রসিংগুলোতে ট্রেন ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণে লোকবল না থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। আখাউড়া রেলওয়ে পুলিশের হিসেব মতে, গত এক বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনের ধাক্কায় এবং কাটা পড়ে ৩৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদের মধ্যে সাতজন নারী ও ২৮ জন পুরুষ।
সরেজমিনে সদর উপজেলার কাছাইট, ভাদেশ্বরা, মাছিহাতা, পাঘাচং, চিনাইরসহ কয়েকটি লেভেল ক্রসিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, কোনোটাতেই গেটকিপার নেই। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ ও যানবাহন। জানা যায়, অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের বেশির ভাগ সড়ক স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন। কিন্তু নিরাপত্তায় কোনো উদ্যোগ নেয় না এলজিইডি। রেল কর্তৃপক্ষেরও রয়েছে উদাসীনতা। রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, রেলপথে লেভেল ক্রসিং তৈরি করতে হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পূর্বানুমতি নিতে হয়। রেলপথের দুই পাশে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ফটক নির্মাণ করতে হয়। এ? ছাড়া কমপক্ষে তিনজন প্রহরীর মজুরি, সিগন্যাল ব্যবস্থাপনার খরচও বহন করতে হয় সংশ্লিষ্টদের। এরপর সরেজমিনে পরিদর্শন করে রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণের পর নিকটস্থ রেলস্টেশন থেকে ওই ক্রসিংয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদন নিয়ে লেভেল ক্রসিং নির্মাণ ব্যয়বহুল হওয়ায় নিজেদের মতো দুই পাশে রাস্তা দেখিয়ে লেভেল ক্রসিং হিসেবে ব্যবহার করছে।
চিনাইর এলাকার লেভেল ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হওয়া অটোরিকশা চালক আনোয়ার বলেন, এখান দিয়ে ট্রেন এলে দেখা যায় না। দুই দিকে দুইটি বাঁক রয়েছে। এখানে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আখাউড়ার সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, বৈধ গেটগুলোতে আমরা যথাযথ লোকবল দিয়ে নিরাপত্তা দিয়ে থাকি। আর যেগুলো অনুমোদন ছাড়া করা হয়েছে সেগুলো আমাদের বিভাগীয় প্রকৌশলীর নির্দেশনায় বন্ধ করে দিচ্ছি। আমাদের এ কাজ চলমান রয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদুল হক জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ের রাস্তার ওপর আমাদের ১৭টি রাস্তা আছে। সেখানে আমরা গেট লস (নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্বপালনের কক্ষ) করে দেব।
এজন্য প্রকল্প তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেখানে লোকবল কাদের থাকবে সেটি নিয়ে স্থানীয় সরকার ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আলোচনা হচ্ছে।