চট্টগ্রাম নগরীর এলাকায় উদ্ধার হওয়া এক অজ্ঞাতনামা নারীর লাশের রহস্য উদঘাটন করেছে সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। একইসঙ্গে ভিকটিমের পরিচয় শনাক্তের পাশাপাশি প্রধান আসামি ইব্রাহিম হাওলাদার (২৪) কে শুক্রবার ভোরে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার সিএমপি পুলিশ লাইনসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলেন সিএমপির ডিবি (বন্দর-পশ্চিম) উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, নিহত নারী একজন গার্মেন্টস কর্মী হলেও তার কর্মস্থলের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে পাশের এক দোকান থেকে পাওয়া একটি ক্যাশ মেমোর মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তদন্ত এগিয়ে যায়। এরই মধ্যে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন আসামি ইব্রাহিম হাওলাদার চট্টগ্রাম থেকে বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে জানা যায়। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া রয়েল পরিবহনের একটি বাস থেকে ঢাকার পোস্তগোলা ব্রিজের ওপর সন্দেহভাজন ইব্রাহিম হাওলাদারকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে টুম্পা আক্তার নামের ওই নারীকে হত্যার কথা স্বীকার করে।
তিনি বলেন, ইব্রাহিম হাওলাদারের সাথে টুম্পার ইমুর মাধ্যমে পরিচয় হয়। সে সময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। তখন এক পর্যায়ে টুম্পা তার স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে ইব্রাহিমের সাথে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। গত বছরের আগস্টে তারা চট্টগ্রামে আসেন। এরপর টুম্পা গার্মেন্টেসে চাকরি করে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করে আসছে।
পুলিশ জানায়, গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় নগরীর বন্দর থানার কলসীদিঘী পাড়ে আলী সওদাগরের বিল্ডিংয়ের নিচতলার তালাবদ্ধ কক্ষ থেকে অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি, কারণ বাড়ির মালিকের কাছে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংরক্ষিত ছিল না এবং আশপাশের বাসিন্দারাও কোনো তথ্য দিতে পারেননি। এরপর ডিবি (বন্দর-পশ্চিম) তদন্তে জানতে পারে, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নিহত টুম্পা আক্তার (২২) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার বাসিন্দা ছিলেন এবং চট্টগ্রামের সিইপিজেডে প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেডে কর্মরত ছিলেন। তিনি কলসীদিঘী এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। ইব্রাহিম হাওলাদারের সঙ্গে তার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল এবং তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একই বাসায় থাকতেন। পারিবারিক কলহের জেরে ২৬ মার্চ রাত সাড়ে ১২টার দিকে ইব্রাহিম হাওলাদার পরিকল্পিতভাবে ঘুমন্ত টুম্পাকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং বাসার দরজায় তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যায়। হত্যার পর নিহতের চার বছর বয়সী সন্তান মাহিমকে পাশের একটি বাসার সামনে রেখে সে দ্রুত চট্টগ্রাম ছাড়ার চেষ্টা করলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এঘটনায় বন্দর থানায় নিহত টুম্পার ভাই বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম