রাজশাহীর বৃদ্ধ মীর রুহুল আমিনের (৭০) আত্মহত্যা সবাইকে নাড়া দিয়েছে। গত সোমবার বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলস্টেশনে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। যার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এরপর থেকেই উৎসুক মানুষ ভিডিওটি শেয়ার করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছে। তবে অনুসন্ধান বলছে, ঋণের হতাশা থেকেই পিঁয়াজ চাষি রুহুল আমিন বেছে নিয়েছেন এমন পথ।
মীর রুহুল আমিনের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মাঝপাড়া বাউসা গ্রামে। আড়ানী রেলস্টেশনে ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়ার সময় কয়েকজন তরুণ টিকটক করছিলেন। তাদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে এ দৃশ্য। এতে দেখা যায়, স্টেশনে একটি ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। আরেকটি ট্রেন স্টেশনে ঢুকছে। ট্রেন কাছে আসা মাত্রই রুহুল আমিন লাইনের ওপরে শুয়ে পড়েন। মুহূর্তেই ট্রেনের চাকা তাঁর দেহকে দুই ভাগ করে দেয়। গতকাল রুহুল আমিনের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর স্ত্রী মরিয়মের সঙ্গে। ফেসবুকে নানা কল্পকাহিনি দেখে তিনি হতভম্ব। ফেসবুকে বলা হচ্ছে, তাঁর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বাস্তবে তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ২০-২২ বছর আগে মেয়ের বিয়ে হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে। মেয়ে থাকেন শ্বশুরবাড়িতে। ছেলে ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন, থাকেন সেখানেই। গ্রামের বাড়িতে শুধু মা-বাবা থাকেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রুহুল আমিনের খুবই ভালো সম্পর্ক। মরিয়ম বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে খাওয়াদাওয়ার পর ডাক্তার দেখানোর কথা বলে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। এরপর দুপুরে তাঁর সঙ্গে মোবাইলে দুবার কথাও হয়। শেষবার তিনি বলেছেন, ‘কাল পিঁয়াজ তুলতে হবে, আকাশে মেঘ করছে। পলিথিন আনতে হবে।’ রুহুল আমিন স্ত্রীকে আরও জানান, তিনি আড়ানীতে এসেছেন। পলিথিনি নিয়ে বাড়ি আসছেন। ছেলে মীর রনি জানান, পিঁয়াজ চাষের জন্য তার বাবা স্থানীয় তিনটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ১ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ঋণ করেছিলেন। প্রতি সপ্তাহে তাঁকে ৪ হাজার ৪৫০ টাকা কিস্তি দিতে হতো। এখনো ৯৯ হাজার ২৯০ টাকা ঋণ আছে। ঈশ্বরদী জিআরপি থানার ওসি জিয়াউর রহমান বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি রুহুল আমিন এনজিও থেকে ঋণ করে পিঁয়াজ চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়নি বলে হতাশায় ভুগছিলেন। শারীরিকভাবে একটু অসুস্থও ছিলেন। এসব কারণে তিনি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’