ইতালিতে চারদিনের সফর শেষে দেশে ফিরেছেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস। এই সফরে প্রথম ব্রিটিশ রাজা হিসেবে ইতালির পার্লামেন্টে ভাষণ দেন তিনি। পোপ ফ্রান্সিস ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গেও একান্ত সাক্ষাৎ করেন রাজ দম্পতি। পাশাপাশি চালর্স ও ক্যামিলার ২০তম বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত হয় বিশেষ রাষ্ট্রীয় ভোজ।
বেশ রাজকীয় ভঙ্গিতেই ইতালিতে ২০তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন শেষে যুক্তরাজ্যে ফিরেছেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। এই চার দিনের সফরে চষে বেড়িয়েছেন ইতালির বেশ কিছু অঞ্চল। ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাজা-রানীর এই ইতালি সফরকে কোনোভাবেই রোমান হলিডে বা ভ্রমণ হিসেবে দেখছে না রাজপরিবার। চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং ইউক্রেন পরিস্থিতি গুরুত্ব পেয়েছে এই সফরে। যা ইতালির পার্লামেন্টে রাজা তৃতীয় চার্লসের ভাষণে স্পষ্ট হয়েছে।
রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রোস্টেট সার্জারি পরবর্তী এই ইতালি সফর নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত রানি ক্যামিলা। রাজা তৃতীয় চার্লস যে সেরে উঠছেন, তা তার চঞ্চলতা দেখেই স্পষ্ট হয়েছে। রানি ক্যামিলা রাজা তৃতীয় চার্লসের এই এগিয়ে চলা নিয়ে আরও বেশি আশাবাদী।
এদিকে, ব্রেক্সিট পরবর্তী বিশ্বে যুক্তরাজ্যের ভাবমূর্তি নিয়ে এই সফর গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। এই সফরকে কেন্দ্র করে সূত্রের বরাত দিয়ে স্কাই নিউজ জানিয়েছে, অচিরেই রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। আগেই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার রাজা’র পক্ষ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন। যেখানে একটি ব্যক্তিগত সাক্ষাতের ইঙ্গিতসহ একটি রাষ্ট্রীয় সফরের কথা বলা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, সেটি এই গ্রীষ্মেই হতে পারে। সম্ভবত জুনের শেষ দিকে অথবা জুলাইয়ের শুরুতে, তা না হলে আগস্টের শেষ বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে হতে পারে। সেই সাক্ষাতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে রাজা তৃতীয় চার্লস ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যে।
শুধু ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাৎই নয় ব্রিটেনের রাজপরিবার সূত্র বলছে- আরও রাষ্ট্রীয় সফরের পরিকল্পনা রয়েছে রাজা তৃতীয় চার্লসের। প্রাসাদ সূত্র বলছে, তিনি কানাডার প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছেন এবং ভবিষ্যতেও দিয়ে যাবেন। এর আগে, যখন কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য ঘোষণা নিয়ে ট্রাম্প রসিকতা করেন- তখনও কানাডাকে সমর্থন দেয় ব্রিটেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটেনের রাজা-রানীকে ইতালিতে উষ্ণ অভ্যর্থনা, বিয়ের ২০ বছর উদযাপন ও ইতালির পার্লামেন্টে রাজার ভাষণসহ গুরুত্বপূর্ণ এই সফরকে সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। সফরের শেষ দিন রাভেন্না শহরের বাজার ঘুরে বেড়ান রাজা ও রানী। এসময় রাজ দম্পতিকে সঙ্গ দেন ইতালির প্রেসিডেন্ট।
নাৎসি জার্মানির দখল থেকে রাভেন্না স্বাধীনের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করে শহর কর্তৃপক্ষ। টাউন হলের বারান্দায় ইতালীয়দের হাত নেড়ে অভিবাদন জানান রাজা চার্লস। পরিদর্শন করেন বাইরন জাদুঘর, দার্শনিক দান্তের সমাধিসৌধ ও স্যান ভিটালির ব্যাসিলিকা।
বিবাহ বার্ষিকীর দিনটিতে ইতালিয়ান পার্লামেন্টের জয়েন্ট সেশনে বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ রাজা। ইতালির ইতিহাসে এমন ঘটনা প্রথম। হাস্যোজ্জ্বল চার্লস কৌতুকের পাশাপাশি তুলে ধরেন দুই দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস। এরপরই রাজ দম্পত্তির সম্মানে কুইরিনাল প্রাসাদে আয়োজন করা হয় রাষ্ট্রীয় ভোজ। যেখানে উপস্থিত ছিলেন দেড়শ অতিথি।
গত মাসে ক্যানসারের চিকিৎসাজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৭৬ বছর বয়সী রাজাকে বেশ প্রাণবন্ত ও হাস্যোজ্জ্বল দেখাচ্ছিল। চার্লস ইতিপূর্বে ১৮ বার ইতালি সফর করেছেন। প্রোস্টেট সার্জারির পর ক্যান্সারে আক্রান্ত রাজার প্রথম বিদেশ সফর এটি। আর সফরটি স্মরণীয় হবার অন্যতম করার ১৬ বছর পর ইতালির মাটিতে রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রত্যাবর্তন।
বিডি-প্রতিদিন/শআ