কর ফাঁকির পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে ১১ বছরের ব্যবধানে। যেখানে ২০১২ সালে কর ফাঁকি ৯৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা, সেখানে ২০২৩ সালে ২ লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে করপোরেট কর ফাঁকি ১ লাখ ১৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া রয়েছে ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি, উচ্চ করহার, জটিল আইনি কাঠামো ও প্রশাসনিক দুর্বলতা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ‘করপোরেট আয়কর সংস্কার ও কর ন্যায্যতার দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে সিপিডি। ব্রিফিংয়ে আলোচক ছিলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী তামিম আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজাত যাবিন, রহিমআফরোজ বাংলাদেশের ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার জাহিদ হোসেন, সিপিডির তাসফিউর নূর পিংকি প্রমুখ। গত বছরের ডিসেম্বরে পরিচালিত এ জরিপে ঢাকা ও চট্টগ্রামের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন ১২৩টি কোম্পানির মতামত নিয়েছে সিপিডি। এ ছাড়া তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক, তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও চামড়া খাতের ব্যবসায়ীদের পাঁচটি সংগঠনের নেতাদের মতামত নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কর ন্যায্যতার দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপক কর ফাঁকি সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহ করে এবং আইনের প্রতি অনুগত নাগরিকের ওপর করের বোঝা বাড়িয়ে দেয়। তাই ক্রমাগত কর ফাঁকি দেওয়া প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশে ২ লাখ ৮৮ হাজার নিবন্ধিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে কর রিটার্ন জমা দেয় মাত্র ৯ শতাংশ। বাকি ৯১ শতাংশ কোম্পানি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কর ফাঁকি দিচ্ছে। ফাঁকি দেওয়া কোম্পানিরগুলোর ৭৫ শতাংশও কর দিলে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব। ২০৩০ সালের মধ্যে কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে আগামী ছয় বছরে অতিরিক্ত ১ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার অতিরিক্ত আদায় করতে হবে। খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় থাকা বাংলাদেশের জন্য এ পরিস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জ। এলডিসি উত্তরণের পর বহুজাতিক কোম্পানির বিনিয়োগ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার ফলে কর ফাঁকি ও কর পরিহারের ঝুঁকিও বাড়বে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি করব্যবস্থার ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন ও নীতিগত সংস্কারের সুপারিশ করেছে সিপিডি। খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, দুর্নীতি না কমিয়ে করকাঠামোর সংস্কার করে লাভ হবে না। কর ফাঁকি ছাড়াও প্রণোদনা ও করছাড়ের কারণে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাচ্ছে। বিনিয়োগের কথা বলে বিভিন্ন খাতভিত্তিক করছাড় দেওয়া হচ্ছে। এগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ করা উচিত। প্রণোদনা বা করছাড় বিনিয়োগের ভিত্তি হতে পারে না বলেও তিনি মনে করেন।