বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, যেসব সম্পদ ও প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের দখলে ছিল সেগুলো পুনরুদ্ধারের ঘটনাকে দখলদারি বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মন পরিচ্ছন্ন। তিনি নির্বাচন দিতে চান। কিন্তু তাঁর আশপাশে সুবিধাভোগী একদল আছেন, যাঁরা আওয়ামী লীগের আমলেও সুবিধা ভোগ করেছেন, এখনো করছেন, আগামী দিনেও করবেন। তাঁরা নির্বাচনের পথে বাধা সৃস্টির অপচেষ্টা করছেন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপির আগামী দিনের রাজনীতিসহ দেশের সামগ্রিক বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন সাবেক এই মন্ত্রী ও ঢাকা সিটির মেয়র।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন-এ পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির অবস্থান কী?
মির্জা আব্বাস : আমরা আশা করছি, সরকার তার কথা রাখবে। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মন পরিচ্ছন্ন। তিনি নির্বাচন দিতে চান। কিন্তু তাঁর আশপাশে সুবিধাভোগী একদল আছেন, যাঁরা আওয়ামী লীগের আমলেও সুবিধা ভোগ করেছেন, এখনো করছেন, আগামী দিনেও করবেন। এঁরা প্রশাসন, সচিবালয়, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভিতরে-বাইরে সব জায়গাতেই আছেন। তাঁরা বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগের জন্য পুষ্পশয্যা বানিয়ে রেখেছেন। যদি আওয়ামী লীগ আসতে পারে তবে তাঁরা সাদরে বরণ করে নেবেন। এমনকি ড. ইউনূসের ক্যাবিনেটেও আওয়ামী লীগের লোক রয়ে গেছেন। তিনি যদি শক্ত না থাকেন, তবে এসব সুবিধাভোগী তাঁকে ক্ষমতা ছাড়তে দেবেন না।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : যদি সরকার ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হয়, সে ক্ষেত্রে বিএনপি কী করবে?
মির্জা আব্বাস : সেটা তখনকার পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। ওই সময় জনগণের মনের কী অবস্থা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কী অবস্থা সবকিছু মিলেই সিদ্ধান্ত হবে। তবে আমাদের বিশ্বাস, কোনো অনির্বাচিত সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে চাইবে না।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : অদূর ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের কোনো সম্ভাবনা দেখেন কী? রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ টিকে থাকবে কি না?
মির্জা আব্বাস : দল হিসেবে এর আগেও আওয়ামী লীগ একুশ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। তখনকার অবস্থা ছিল অন্যরকম। তখন আওয়ামী লীগ একটা রাজনৈতিক দল ছিল। এখন নামসর্বস্ব আওয়ামী লীগ আছে। এটি আর রাজনৈতিক দল নাই। এটি পরিণত হয়েছে সন্ত্রাসী দলে। সন্ত্রাসী দলের টিকে থাকার সম্ভাবনা নাই।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তবে জনগণের সামনে নতুন কী কী দেবে?
মির্জা আব্বাস : বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রথমত আওয়ামী লীগ যেসব খারাপ কাজ করেছে বিএনপি সেগুলো বন্ধ করবে। বিএনপি দেশের মানুষকে ইতিবাচক রাজনীতির পথ দেখাবে। কারও বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলদারির কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে দলের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এলাকার বহু কর্মীকে পুলিশে দিয়েছি। ক্ষমতায় গেলেও আমাদের এ ব্যবস্থা জারি থাকবে। এর আগেও বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ পরিচালনা করা হয়। এ অপারেশনে যারা মারা গিয়েছিল তার বেশির ভাগই বিএনপির নেতা-কর্মী ছিলেন। আর বর্তমানে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব দখলদারির অভিযোগ উঠছে তার অধিকাংশই মিথ্যা। এতকাল যাবৎ বিএনপি নেতা-কর্মীদের যেসব সম্পদ ও প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের দখলে ছিল সেগুলো পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো প্রায় সময়ই দখলদারি বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলি, বৈশাখী টেলিভিশনের মালিকানা ছিল আমার। আওয়ামী লীগ দখল করেছে। এখন আমি যদি আমার মালিকানা পুনরুদ্ধার করতে যাই তবে দেখা যাবে আমার বিরুদ্ধে মিডিয়া দখলের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এর পেছনের কারণ কী?
মির্জা আব্বাস : বিএনপির জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে দলের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে নানা অপকর্মের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। অথচ যেসব অপকর্মের গুজব ছড়ানো হচ্ছে, এগুলো রোধ করতে সরকারের বিশেষ বাহিনীর হাতে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে। তার পরও দিনদিন বিএনপির বিরুদ্ধে গুজবের তীব্রতা বাড়ছে। নির্বাচন যত পেছাবে এগুলো আরও বাড়বে। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোই লাভবান হবে। এজন্যই আমরা দেখতে পাচ্ছি, কেউ কেউ নির্বাচন পেছানোর কথা বলছেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ছাত্ররা নতুন দল গঠন করেছেন। তাঁদের কার্যক্রম কীভাবে দেখছেন? তাঁদের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্কটা এখন কেমন?
মির্জা আব্বাস : নতুন যে কোনো দলকেই আমরা স্বাগত জানাই। ওদের পথপরিক্রমা সুন্দর হোক, এ কামনা করি। ইদানীং দেখতে পাচ্ছি তারা সরকারি সুবিধা ভোগ করছে। এটা গ্রহণযোগ্য না। এমনকি অফিশিয়াল নোট যাচ্ছে তাদের প্রটোকল দেওয়ার জন্য। তারা কোথায় থাকবে, কী খাবে তা ডিসি অফিস থেকে দেওয়া হচ্ছে। তাদের দুজন প্রতিনিধি এখনো সরকারের ভিতরে রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
মির্জা আব্বাস : এর বাস্তবায়ন দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর নির্ভর করবে। তা ছাড়া ভারতের সঙ্গে হাসিনার দীর্ঘদিনের একটা দেনাপাওনার সম্পর্ক আছে। হাসিনা দম্ভভরে বলত, ভারতকে যা দিয়েছি, তার ঋণ শোধ করতে পারবে না। হাসিনার এ কথা যদি সত্য হয়, তবে ভারত তাকে ফেরত দেবে না। তবে হাসিনাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে ও দেশে ফিরিয়ে আনতে আমাদের দেশ ও দলের পক্ষ থেকে যতটুকু করা প্রয়োজন তা চলমান রাখতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আমাদের দেশে এ শুল্ক আরোপের প্রভাবটা কেমন হবে? করণীয় কী?
মির্জা আব্বাস : বিশ্বব্যাপী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যে ব্যক্তিগত প্রভাব রয়েছে সেটা কাজে লাগিয়ে বর্তমান সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিলে এ সংকটের তীব্রতা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছি। যদি তা না হয়, তবে আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিএনপির নির্বাচনি প্রস্তুতি সম্পর্কে বলুন।
মির্জা আব্বাস : আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যখন আমরা আন্দোলন শুরু করেছি তখন থেকেই আমাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি ছিল। এখনো আছে। যদি বলা হয়, কাল নির্বাচন হবে আমরা তাতেও প্রস্তুত আছি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : সরকারের আট মাসের কার্যক্রম কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মির্জা আব্বাস : ড. ইউনূস ছাড়া সরকারের অন্য উপদেষ্টাদের দৃশ্যমান তেমন কোনো সাফল্য দেখতে পাই না। ড. ইউনূসের সাফল্যগুলো দৃশ্যমান এবং ফলপ্রসূ।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : সরকারের কাছে আপনাদের বর্তমান প্রত্যাশা কী?
মির্জা আব্বাস : অবিলম্বে সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে নির্বাচন আয়োজন করার।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কী?
মির্জা আব্বাস : একটা ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তাদের আইসিটি আইনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে যারা ফ্যাসিস্টের ভূমিকা পালন করেছে তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।