কোরআন অবতরণের মাস রমজান। ১২ মাসের শ্রেষ্ঠ মাস এই রমজানুল মুবারক। এই শ্রেষ্ঠ মাসের সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ রজনি শবেকদর; যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। শব শব্দটি ফারসি ভাষার। এর অর্থ রাত বা রজনি। কদর শব্দের অর্থ হলো- মর্যাদা, সম্মান ও মহিমান্বিত। শবেকদর অর্থ হলো- মর্যাদাপূর্ণ রাত বা মহিমান্বিত রজনি। এই রাতে মহান প্রভু লাওহে মাহফুজ থেকে গোটা কোরআনে কারিম পৃথিবীর প্রথম আকাশে ‘বাইতুল ইজ্জা’ নামক স্থানে একত্রে অবতরণ করেন। মতান্তরে এই রাতে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর হেরা গুহায় কোরআন অবতরণের সূচনা করেন। এই রাতে কোরআন অবতরণের ফলে রাতটি শবেকদর বা মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত রজনি। কোরআনে কারিমের ভাষ্যমতে, এই রাতে ইবাদত করা হাজার মাস ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। এ মর্মে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে একটি সুরা অবতরণ করেন। ‘নিশ্চয় আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনিতে। আর মহিমান্বিত রজনি সম্বন্ধে আপনি কি জানেন? মহিমান্বিত রজনি হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও জিবরাইল (আ.) অবতীর্ণ হয় তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সেই রজনি, যা ফজর উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সুরা কদর)। জিবরাইল (আ.) এবং অন্যান্য ফেরেশতাগণ এই রাতে আল্লাহর রহমত, বরকত ও মাগফিরাত নিয়ে অবতরণ করেন। প্রভাত হওয়া পর্যন্ত এ রাতের ফজিলত, মর্যাদা ও শান্তি অব্যাহত থাকে। ফজরের সময় হলে এ রাতের বিশেষ মহত্ত্বের সীমা শেষ হয়। তাই যে কেউ এ রাতে ইবাদত করতে চায় পুরো রাতই তার জন্য সুযোগ থাকে। শেষ রাতে আল্লাহর করুণা আরও ব্যাপক হয়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান নিয়ে সওয়াবের আশায় শবেকদর পালন করবে তার অতীতের সব পাপ ক্ষমা করা হবে।’ (বুখারি, মুসলিম)। অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি শবেকদরের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে সে যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।’ (নাসায়ি)
এই রাতের সর্বোত্তম ইবাদত হলো আল্লাহর কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করা ও ক্ষমা চাওয়া। আম্মাজান আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি বললাম হে আল্লাহর রসুল! আমি যদি শবেকদর সম্পর্কে জানতে পারি তাহলে এ রাতে আমি কী বলব’? রসুলুল্লাহ (সা.) ফরমান, তুমি বলবে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী।’ (হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করা আপনি পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন)। (তিরমিজি)
এই রাতে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত নেই। বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, তাসবিহ, জিকির ও তওবা করা এবং নিজের জন্য, সন্তান-সন্ততি, মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, গুরুজন, দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ ও মুক্তি কামনা করা, মহানবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পড়া- এসব আমল এ রাতের বিশেষ আমল।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।