টেস্ট খেলছে ২৫ বছর। ২০০০ সাল থেকে দেড় শর ওপর টেস্ট খেলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত গড়ে তুলতে পারেনি কোনো টেস্ট সংস্কৃতি। সাদা পোশাক ও লাল বলে কীভাবে টেস্ট খেলতে হয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এখনো পুরোপুরি শিখে ওঠেনি। অথচ সিলেট টেস্ট শুরুর আগের দিন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, সিলেট থেকে নতুন টেস্ট সংস্কৃতি শুরু হবে। দেশের ক্রিকেটকে দেখা যাবে নতুন চেহারায়। কোথায় কী? টেস্টের প্রথম দিন শেষে টাইগার অধিনায়কের মুখের কথা, আর মাঠের পারফরম্যান্সের বিস্তর ফারাক। দুই যুগের টেস্ট পারফরম্যান্সেরই প্রতিচ্ছবি দেখা গেছে সিলেটের সবুজ ঘাসের উইকেটে। সফরকারী জিম্বাবুয়ের সাধারণ মানের বোলারদের বোলিংয়ের বিপক্ষে কোনোরকম প্রতিরোধই গড়তে পারেনি টাইগাররা। দিনের প্রথম ভাগে হতশ্রী ব্যাটিং করেছেন সাদমান, মুশফিক, মাহামুদুল জয়রা। দ্বিতীয় ভাগে নির্বিষ বোলিং করেছেন নাহিদ রানা, হাসান মাহমুদ, মেহেদি মিরাজরা। টেস্টের প্রথম দিন শেষে যে চিত্র, তাতে ঘুড়ির সুতোটা ধরে ফেলেছে জিম্বাবুয়ে। নাজমুল বাহিনীর ১৯১ রানের জবাবে সফরকারীরা দিন শেষ করেছে বিনা উইকেটে ৬৭।
দলের যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্সের পর মিডিয়ার মুখোমুখি হননি কোনো ক্রিকেটার। হয়তো জানতেন, নানামুখী প্রশ্নে বিব্রত হতে হবে। সেজন্য দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন মুখোমুখি হন। প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন নানানভাবে। উত্তর দেওয়ার মাঝেই অভিযোগের শেষ ছিল না। সাফাইও গেয়েছেন ক্রিকেটাররা। একটি পঞ্চাশ রানের ইনিংস না থাকার পরও সহকারী কোচ জানিয়েছেন ক্রিকেটাররা চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ‘মানসিক দিক থেকে ছেলেরা অনেক কিছু পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে। নিজেদের উন্নতির ব্যাপারে তারা অনেক বেশি সচেতন। হয়তো আমরা খুবই খারাপ খেলেছি। কিন্তু এটা বলা যাবে না যে, আমরা চেষ্টা করছি না। বা তাদের বড় হওয়ার ইচ্ছা নেই, এটা বলা যাবে না। নতুন কিছু আমরাও চাচ্ছি। আমাদের অ্যাবিলিটি যেন আরও ভালো হয়। সেদিকে আমরা চেষ্টা করছি। যে জায়গাগুলোতে আমাদের উন্নতি করার দরকার, চেষ্টা করছি সেই জায়গায় যেন উন্নতি করার। আজকে ব্যাটিং মোটেও ভালো হয়নি। বোলিংও ভালো হয়নি। চেষ্টা করব এ জায়গা থেকে আমরা কীভাবে ম্যাচে তাড়াতাড়ি ফিরতে পারি।’
সহকারী কোচ সালাউদ্দিন চাইছেন ম্যাচে ফিরতে। অথচ সিলেটের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ইতিহাস বলছে, ভিন্ন কথা। ২০১৮ সালে টেস্ট ভেন্যু হিসেবে অভিষেক হয় সিলেটের। ওই টেস্টে দুর্দান্ত বোলিং করে ১১ উইকেট নিয়েছিলেন বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। অথচ টেস্টটি বাংলাদেশ ১৫১ রানে হেরেছিল ব্যাটিং ব্যর্থতায়। এবার কি পারবে নাজমুল বাহিনী? সময়ই উত্তর দেবে। তবে সালাউদ্দিন স্বীকার করেছেন ক্রিকেটারদের ভুল করার কথা, ‘আমি মনে করি টেকনিক্যালি আমরা কিছু মিসটেক করেছি। ম্যাচের মধ্যে হঠাৎ বাজে শট খেলে ফেলেছি। যখন কামব্যাক করেছি, তখনই একজন সেট ব্যাটসম্যান আউট হয়েছে। এটা পুরোটাই আসলে মেন্টাল সেট। আমি মনে করি ওদের হয়তো রুটিন বা প্রসেস ভালো হয়নি। প্রতিটি বল কীভাবে ফেস করতে হবে, সেই প্রক্রিয়ায় ওরা থাকেনি। এখানে আমাদের দ্রুত কাজ করতে হবে। প্রতিটি বল ফেস করার আগে কীভাবে আমাদের রুটিন ওয়ার্ক করার কথা, সেটা আমাদের করতে হবে। অন্য ফরম্যাটে আপনি একবারই সুযোগ পাবেন। টেস্ট ক্রিকেট আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেয়। সেখানে ভালো করাটা অনেক বেশি জরুরি।’
টেস্টে একটি মাত্র পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব রানের জুটি গড়েছেন মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনে তৃতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৬৬ রান। নাজমুল ৪০ ও মুমিনুল ৪৮ রান করেন। এ ছাড়া উল্লেখ করার মতো স্কোর নেই কোনো ব্যাটারের। সহকারী কোচের কথা মতো দ্বিতীয় ইনিংসে কি পারবেন ব্যাটাররা ঘুরে দাঁড়াতে?